বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ইতিমধ্যেই কোভিড রীতিমতো আতঙ্ক বাড়িয়েছে দেশে। ব্যতিক্রম নয় আমাদের রাজ্যও। রোজই আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ ইতিমধ্যে তাদের পাশে এগিয়ে এসেছেন একাধিক তারকা। কেউ সিনেমার রুপালি পর্দার স্টার কেউবা ক্রিকেটের কিংবদন্তি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, দেব, অনিকেত চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন নিজের মত করে। কেউ তৈরি করছেন সেফ হোম কিউবা অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের দরজায় দরজায়। এবার সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেন এভারেস্টজয়ী বাঙালি পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, রুদ্রপ্রসাদ হালদাররাও।
‘সেভেন মাউন্টেনিয়ার’ হিসেবে বাঙালির গর্ব সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই কোভিড কালে চারিদিকে যখন অক্সিজেনের হাহাকার, ঘরে বসে থাকা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষেও। আর সেই কারণেই কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক এবং লিভার ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে গত ৭ মে “অক্সিজেন অন হুইলস” প্রজেক্ট শুরু করেন তারা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকারও। দুটি অ্যাম্বুলেন্স সর্বক্ষণ পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের বাড়ি বাড়ি। থাকছে অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর, কোভিড রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার ইত্যাদি। ইতিমধ্যেই উপকৃত হয়েছেন বহু মানুষ। সত্যরূপ জানান, “আমরা প্রায়ই একুশটা কন্সেন্ট্রেটর নিয়ে শুরু করেছিলাম। চাহিদার তুলনায় যোগান তাও কম। কারণ কল এসেছে প্রায় ছ হাজার। তবে তার মধ্যে এমারজেন্সি কেস বেছে নিয়ে আমরা আমাদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। অক্সিজেন স্যাচুরেশন নব্বইয়ের নিচে নেমে গেলে তখন প্রথম দরকার অক্সিজেন এবং হসপিটালাইজেন। আমরা চিনেছি রোগীর পরিবার যাতে অন্তত অক্সিজেনের বিষয়টিতে নিশ্চিন্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেকটাই সুবিধা হয়।”
শুধু কলকাতা এবং তার আশপাশেই নয়। সত্যরূপ জানান ইতিমধ্যে অনেক কল এসেছে জেলা থেকেও আর সেই কারণেই আগামী রবিবার থেকে জেলা জেলাতেও “অক্সিজেন অন হুইলস” প্রজেক্ট শুরু করতে চলেছেন তারা। সত্যরূপ বলেন, “অনেকে জেলা থেকেও ফোন করে সাহায্য চাইছেন, সেই কারণেই আমরা ঠিক করেছি অন্তত আট-দশটি জেলাতে আগামী রবিবার থেকে এই প্রোজেক্ট শুরু করব। যার মধ্যে যেমন থাকছে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং তেমনি থাকছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান প্রভৃতি জেলাও।”
কোভিড আর্তদের সেবায় গত বছর প্রথম ঢেউয়ের সময় থেকেই শুরু হয় কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক। এগিয়ে এসেছিলেন অভিনেতা দেব শংকর হালদার, ডাক্তার অভিজিৎ চৌধুরী, ক্রিকেটার সুদীপ মুখার্জির মত একাধিক কৃতি মানুষ। সেই সংগঠনের হাত ধরেই এবারও শুরু হয় অক্সিজেন হুইলস প্রজেক্ট। সত্যরূপ জানান, শুধু কৃতিরাই নয় রয়েছেন একাধিক মেডিকেল স্টুডেন্ট এবং সাধারণ মানুষও। যারা না থাকলে এই কাজ কখনই সম্ভব হতো না। এদিন একযোগে সকলকেই ধন্যবাদ জানান তিনি।
অন্যদিকে সোনারপুর আরোহী ক্লাবের পক্ষ থেকে এগিয়ে এসেছেন সত্যরূপের আরেক সঙ্গী পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদারও। গত কয়েকদিন ধরেই অক্সিজেনের সমস্যায় ভোগা রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। রুদ্রপ্রসাদ বলেন, “কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক কলকাতা ও তার আশেপাশের এলাকায় কাজ করে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য সোনারপুর পরবর্তী বারুইপুর থেকে ক্যানিং অবধি এলাকায় মানুষের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। কারণ এই সমস্ত এলাকায় মানুষ যথেষ্ট সমস্যায় রয়েছেন। কিছুদিন আগে পর্যন্ত চারিদিকে শুরু হয়েছিল অক্সিজেনের কালোবাজারি। সেই সমস্ত অসাধু চক্র রুখতে আমরা সামান্য দাম ও গাড়ি ভাড়া নিয়ে রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌছে দিচ্ছি। রিফিল করার জন্য যেটুকু টাকা প্রয়োজন সেটুকুই নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছেন একাধিক মানুষ। কেউ কেউ একাই কাজ চালাচ্ছেন। তাদের দেখেই আমাদের এই এগিয়ে আসা। তিনটি শিফটে প্রায় সারাদিন-রাতই কাজ চালাচ্ছি আমরা। এমনকি অনেক বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ওষুধপত্র নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে। তারাও যদি আমাদের সমস্যার কথা জানান, তাহলে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের সংগঠনের ছেলেরাই। ”
করোনার সঙ্গে ইতিমধ্যেই মারাত্মক হয়ে উঠেছে কৃষ্ণ ছত্রাক। বিশেষত অক্সিজেন গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রভাব ফেলছে এই রোগ। রুদ্রপ্রসাদ জানান, “ইতিমধ্যেই বাংলায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পাঁচ জন মানুষ। তাই এই বিষয়ে পড়াশোনা করে রোগীদের সচেতন করার চেষ্টা করছি আমরা।” আগামী দিনে সেফ হোম তৈরি করারও স্বপ্ন রয়েছে তাদের।
দুর্গম পথকে জয় করাই অভিযাত্রীর স্বপ্ন। মহামারীর অন্ধকারে এখন চারদিকে যখন হাহাকার আলোর হাত বাড়াচ্ছেন দুর্গমকে জয় করা অভিযাত্রী সত্যরূপ, রুদ্রপ্রসাদরা। সাথে সাথেই আহ্বান জানাচ্ছেন আপনাকেও।
যোগাযোগ করুনঃ
কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কঃ ৭০৪৪০৪১০১০/৭০৪৪০৪১০১৫
সোনারপুর আরোহী ক্লাবঃ
রাত ১২টা – সকাল ৮টাঃ ৮৪২০১৫৫৬০৫
সকাল ৮টা – বিকাল ৪টাঃ ৯৮৮৩১০৩৫৭৫
বিকাল ৪টা – রাত ১২টাঃ ৯৯০৩৩১৩৩০০