বাংলা হান্ট ডেস্ক: কথায় আছে “ইচ্ছে থাকলে মাউন্ট এভারেস্টও জয় করা যায়”। আর তাই তো ভাগচাষীর ছেলে হয়েও সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করলেন তিনি। ছেলের জয়ে চোখে জল বাবা-মায়ের। আমরা জীবনে কিছু করতে গেলেই শুধু অজুহাত খুঁজি। ছোট ছোট বিষয়গুলোকে জীবনে চলার পথে অন্তরায় করে দাঁড় করাই। কিন্তু সুপ্রিয় পন্ডিত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন পরিশ্রমের সামনে অভাব ঠুনকো। বাবার বুট কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না, না ছিল পড়ানোর সামর্থ্য। তবুও সব বাধা কাটিয়ে করেছেন জয়লাভ।
সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতলেন বাংলায় অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন সুপ্রিয় পন্ডিত:
আবারও কেরলকে হারিয়ে সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতেছে বাংলার ফুটবল দল। বঙ্গ তনয়দের কৃতিতে আনন্দিত গোটা পশ্চিমবঙ্গবাসী। ট্রফি জিতে বাংলায় পা রাখতেই শুভেচ্ছাই ভরিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন মহল। তবে এই দলে এক ফুটবলার সকলের নজর কেড়েছেন। তিনি আর কেউ নন হুগলির নালিকুলের বন্দিপুর গ্রামের বছর ২৮-এর সুপ্রিয় পন্ডিত। হুগলির ছেলে এখন বাংলার গৌরব।
সুপ্রিয় পন্ডিতের পথচলাঃ তবে সুপ্রিয় পন্ডিতের পথচলা কখনোই এত সহজ ছিল না। আজ সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতলেও এই সফলতার পিছনে রয়েছে বিরাট কাহিনী। হাজারও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। তবে কখনোই তিনি ভেঙে পড়েন নি। জানা যায় ছোট থেকেই তিনি খেলাধূলা ভালবাসতেন। ইস্ট বেঙ্গল এবং মোহনবাগান খেলা হলে তার মনেও উত্তেজনা সৃষ্টি হত। হয়তো মনে মনে ভাবতেন তিনিও বড় হয়ে ফুটবলার হবে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মাতে শুরু করে। সময় পেলেই ছুটে যেতেন মাঠে, সেই সাথে প্র্যাক্টিসও করতেন।
তবে প্রথম থেকে পরিবার তার এই খেলার পক্ষপাতি ছিলেন না। পড়াশোনাতে মোটামুটি ভালই ছিলেন। কিন্তু অর্থের অভাবে দ্বাদশ শ্রেণীর পর তাতেও ইতি টানতে হয়। তবে পড়াশোনা বন্ধ হলেও খেলা তার বন্ধ হয়নি। যদিও বাড়িতে এই নিয়ে কম বকাবকি শুনতে হয়নি। বাবা ভাগচাষী হওয়ায় দুবেলা সংসার চলে না, বুট কিনে দেবেন সেই সামর্থ্য কই। তবে ছেলে যখন নিজের স্বপ্নে অনড় তাকে টলাবে এই সাধ্যি আছে কার। তাই বকাবকি সত্ত্বেও তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতেন। বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলে পুরস্কারও নিয়ে এসেছেন তিনি। প্রথমদিকে সুপ্রিয়র মা মেনে না নিলেও পরবর্তীতে ছেলে জেদের কাছে তিনি হার মানেন।
আরও পড়ুনঃ আগ্রহ হারিয়েছে দর্শক, TRP তলানিতে, আচমকা বন্ধ হচ্ছে জি বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল
বলা যায় একপ্রকার লড়াই করে তিনি নিজের জায়গা অর্জন করেছেন। কোচ সুবিমল সিনহার হাত ধরে প্রথমে মানকুন্ডুতে শুরু হয় প্র্যাকটিস। বর্তমানে বৈদ্যবাটি কৃষ্টিচক্রের মাঠে প্র্যাকটিস করেন। সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জয় করার পর সুপ্রিয় জানিয়েছেন, ছোট থেকেই তাকে বাবা মা কষ্ট করে মানুষ করেছেন। সংসারে অভাব থাকলেও, তাকে কোন কিছুর অভাব পেতে দেননি। তিনি জানান, তাদের গ্রুপের কাছে সন্তোষ ট্রফি জেতা খুব কঠিন ছিল। সেখানে কাশ্মীর, রাজস্থান, তেলেঙ্গানার মত বড় বড় সব টিম ছিল। যার ফলে খেলাটা অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে। এমনকি সেমিফাইনালও ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে প্রতিপক্ষ যতই মজবুত হোক না কেন তারাও কেউ হাল ছেড়ে দেননি। দলের সকলে একে অপরকে ভরসা যুগিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ আগ্রহ হারিয়েছে দর্শক, TRP তলানিতে, আচমকা বন্ধ হচ্ছে জি বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল
সুপ্রিয়র মতে, দলের প্রতিটি সদস্যই ১০০ শতাংশ দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে দলের ক্যাপ্টেন সকলকে বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি বলতেন যে বাংলার প্রতিটা মানুষের ভরসা রয়েছে তাঁদের উপরে। তাই যেকোনো মূল্যে শেষ পর্যন্ত এই লড়াই লড়ে যেতে হবে। খেলার প্রথম দিকে একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলেও একটার পর একটা গোল মনের জোর বাড়াতে শুরু করে। সুপ্রিয় জানেন সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতে তিনি অবশ্যই খুশি কিন্তু তার মনে আক্ষেপ তিনি একটাও গোল করতে পারেননি।
একসময় যে ছেলের কাছে ভালো বুট ছিল না পড়াশোনা করার মতো টাকা ছিল না সেই ছেলেই সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জয় করে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এমনকি তাঁর বাবা-মায়ের কাছেও ছেলের খেলা মানে এখন বিরাট ব্যাপার। তাইতো একটিও ম্যাচ মিস করতে চান না। জানা গিয়েছে সন্তোষ ট্রফি জয় করার পর মমতা ব্যানার্জি বাংলার দলের প্রতিটি ছেলের জন্য চাকরির ঘোষণা করেছেন। এতে করে সকলেই মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান। তবে সুপ্রিয়র এখন স্বপ্ন আরও বিরাট বড় খেলোয়াড় হবে। হয়তো তার এই স্বপ্ন খুব শীঘ্রই পূরণ হতে চলেছে।