বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সম্প্রতি বহরমপুরে একটি মেসের বাইরে তৃতীয় বর্ষের এক কলেজ ছাত্রীকে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা বাংলায়। ঘটনাটি তদন্ত শুরু করার পরেই বর্তমানে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা হতভম্ব করে তুলেছে সকলকে। এ সকল নতুন তথ্য সামনে আসায় ক্রমশই চড়ছে পারদ আর এবার অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীর বিরুদ্ধে নতুন এক অভিযোগ করে বসলেন মৃতার বাবা।
জানা গিয়েছে, সুশান্ত চৌধুরীর হাত থেকে বাঁচার জন্য বারবার নতুন সিম কিনত তৃতীয় বর্ষের সেই কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরী। একাধিক বার সে ব্লকও করে অভিযুক্ত যুবককে। তা সত্ত্বেও দমে থাকেনি ঘাতক! মৃতার বাবা জানান যে, “সুশান্তের প্রতিনিয়ত বিরক্ত করার কারণে আমরা সুতপা-কে নিজ বাসস্থান থেকে দূরে বহরমপুরের এক কলেজে ভর্তি করি। তবে মেয়েকে এতদূর পাঠিয়েও রোখা যায়নি সুশান্তকে! একের পর এক নম্বর পরিবর্তন করে সে বিরক্ত করতে থাকে সুতপাকে।”
বৈষ্ণবনগরের মহারাজপুরে মৃতার বাড়িতে গিয়ে তার বাবা স্বাধীন চৌধুরীকে এদিন চরম হতাশাগ্রস্ত দেখায়। সুতপার প্রসঙ্গ উঠতেই চোখের জল চলে আসে তাঁর। করুণ কণ্ঠস্বরে তিনি কোনমতে বলে চলেন, “বেশ কয়েক বছর ধরেই সুশান্ত আমাদের মেয়েকে প্রচন্ড বিরক্ত করতে থাকে। তাই আমি ওকে বহরমপুর কলেজে পড়তে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে সুশান্ত আরো চাপ দিতে থাকে আমাদের মেয়েকে। এমনকি সুতপা জানায় যে, সুশান্তের বিরক্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য পাঁচবার সিমও বদল করেছিল ও কিন্তু তাতেও মেলেনি সুরাহা।”
বারবার নম্বর বদল সত্বেও সুতপার নতুন মোবাইল নম্বর কি করে পেত অভিযুক্ত? মৃতার বাবা বলেন, “আমার কাছে খবর আসে যে, সুশান্ত আমার মেয়ের এক বান্ধবীকে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিল। এবং তার কাছ থেকেই সুতপার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করত ও। তাই বারংবার সিম বদলানো সত্বেও রেহাই পায়নি।” তিনি আরো বলেন, “যখনই ও বহরমপুর থেকে বাড়ি ফিরতো, তখন আমরা কেউই ওকে রাস্তায় একা বের হতে দিতাম না। আমি নয়তো ওর মা সবসময় ওর সাথে থাকতো। আগামী জুলাইতে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার পর আমরা ওকে এখানে বিএড কোর্সের ভর্তি করব ভেবেছিলাম। চাকরির পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়া ওর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সব ভেস্তে গেল।”
তবে সুশান্ত চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে সে সুতপাকে বিরক্ত করে চলছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কেন কোন রকম অভিযোগ করেনি পরিবার? এ সম্পর্কে এদিন স্বাধীন বাবু জানান, “পুলিশে অভিযোগ করে কোনও ছেলের ভবিষ্যৎ আমরা নষ্ট করতে চাইনি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আলোচনা করে ব্যাপারটি মিটে যাবে। এমনকি সুশান্তকে পড়াশোনা করে কেরিয়ার বানানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা, কিন্তু এখন সব শেষ।”
মৃতার বাবার পাশাপাশি তার মাকেও এদিন বিষন্ন দেখায়। বারংবার তিনি শুধু একটাই কথা বলে চলেন, “এমন কিছু ঘটার কথা যদি জানতে পারতাম, তাহলে আমি কখনই ওকে যেতে দিতাম না।” সুতপা খুনের ঘটনায় বর্তমানে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসীরা। সকলেরই বর্তমানে একটি দাবি, ‘অভিযুক্ত যুবকের ফাঁসি’।