কখনো নারী কন্ঠের আর্তচিৎকার, কখনো যুদ্ধের ঝনঝনানি! প্রেতপুরী ভানগড়ে যারা রাত কাটিয়েছেন ফেরেননি কেউ

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ভূতের (ghost) উপদ্রব নিয়ে যত গল্প কাহিনী আছে, তার বেশীরভাগটাই সত্যি নয়। কখনো মনের ভ্রম বা কখনো ষড়যন্ত্র। কিন্তু বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে অপ্রাকৃত ব্যাপার স্যাপারকে অস্বীকার করতে পারেন নি কেউ। সেই সব ভুতুড়ে জায়গায় সবার শীর্ষ স্থানটি নিঃসন্দেহে গত ২৫০ বছরের বেশী সময় ধরে দখল করে রেখেছে রাজস্থানের এক কেল্লা, ভানগড় (bhangarh)।

images 65 2

   

সকালে ভানগড় কেল্লা অত্যন্ত নয়াভিরাম। যেন ২৫০ বছর আগের ফেলে আসা অতীতে ফিরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। কিন্তু রাত নামতেই ভানগড়ে জেগে ওঠে এক অন্য জগৎ। ২৫০ বছর আগের অতীত সেখানে জীবন্ত হয়। সে অভিজ্ঞতা এতটাই ভয়ংকর যে এখানে যে সব দু:সাহসী রাত কাটিয়েছেন ফেরেননি কেউ। যারা সন্ধ্যার পর কিছু সময় এখানে কাটিয়েছেন, সেই সব অত্যুৎসাহীদের বেশীরভাগই আজ জীবিত নেই। অপ্রাকৃত বিভীষিকা এখানে এতটাই, ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে এখানে নোটিশ জারি করতে হয়েছে, “সূর্য্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের পরে ভানগড় দুর্গে প্রবেশ নিষেধ”।

images 64 1

জানা যায়, গৌরব তিওয়ারি নামের এক প্যারানরমাল এক্সপার্ট এখানে ভূতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে টিম নিয়ে রাত কাটান। ৫ বছর বাদে গৌরব আত্মহন্তা হন। মৃত্যুর আগে তিনি নাকি বারবার বলতেন, কোনো অশুভ শক্তি তাকে ডাকছে।

 

ভানগড়ের দূরত্ব দিল্লি থেকে গাড়িতে ছয় ঘন্টার কিছু বেশি। সারিস্কা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট এর মধ্যেই এই দূর্গ। দুর্গের ভেতরে আছে প্রচুর প্যালেস, হাভেলি, মন্দির ও দোকানবাজারের ধ্বংসাবশেষ। মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে দর্শনীয় মন্দিরগুলি হল হনুমান মন্দির, সোমেশ্বর মন্দির, কেশব রাই মন্দির, মঙ্গলা দেবী মন্দির,গণেশ মন্দির ও নবীন মন্দির। সৌন্দর্য একেবারে ছবির মত। কিন্তু রাত নামতেই জেগে ওঠে রক্তলোলুপতা।

images 69 1

ভানগড়কে নিয়ে রয়েছে অনেক মিথ। একটি জনশ্রুতির অনুসারে বাবা বালুনাথ নামে এক সাধু এই অঞ্চলে থাকতেন। রাজা মানিসিং এর ভাই, ভগবন্ত দাসের এলাকাটি পছন্দ হওয়ায় তিনি এখানে দূর্গ নির্মান করতে চান। কিন্তু বাবা বালুনাথের শর্ত মেনে তিনি দূর্গ নির্মান করতে পারেন নি। শর্ত বিরুদ্ধ হয়ে দূর্গের ছায়া পড়েছিল বাবা বালুনাথেত কুটিরে। তার অভিশাপের রাতারাতি জনশুন্য হয় এলাকা।

যদিও এই জনশ্রুতিটি তেমন জনপ্রিয় নয়। জনপ্রিয়তম জনশ্রুতি অনুসারে সিঙ্ঘিয়া নামের এক তান্ত্রিক রাজকন্যা রত্নাবতীকে বিবাহ করতে চান। কিন্তু রাজকন্যা তাতে রাজি হন নি। হার না মেনে তান্ত্রিক বেছে নেন বশীকরণের পথ। কিন্তু ভাগ্যদোষে রাজকন্যা তা জানতে পারেন এবং মন্ত্রপুত বশীকরণের জন্য আতর শিশিটি ছুঁড়ে মারেন পাথরের গায়ে। সেই পাথর গড়াতে গড়াতে সিঙ্ঘিয়ার দিকে ছুটে যায়, এবং তার চাপেই তান্ত্রিকের মৃত্যু হয়। মরবার আগে তান্ত্রিক এই অঞ্চলের ধ্বংস হওয়ার অভিশাপ দেন।

images 67 3

যদিও এই কাহিনি দুটি মানতে চাননা যুক্তিবাদীরা। তারা ভানগড়ের সম্পদ তৈরি হওয়া সব ঘটনাকেই মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেন। তবু স্থানীয় ও ভূতে বিশ্বাসীদের মধ্যে ভানগড় নিয়ে ভয়ের অন্ত নেই।

সম্পর্কিত খবর