বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ডিসেম্বরের শুরুতেই বিধানসভার নৌসর আলি কক্ষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তৃণমূলের পরিষদীয় দলের জন্য একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ (WhatsApp Group) তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দল নেত্রীর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ওইদিনই একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে রাজ্যের বিধায়কদের সংযুক্ত করার কাজ শুরু করেছিলেন।
মমতার (Mamata Banerjee) নির্দেশে তৈরি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে ধমক খেল বিধায়করা
তবে গ্রুপ তৈরির পরেই দেখা যায়, অধিকাংশ বিধায়ক লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়েছেন। পরিষদীয় দলের জন্য তৈরী ওই গ্রুপে নিজেদের আত্মপ্রচার শুরু করে দিয়েছেন বিধায়করা। মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) ‘গুডবুক’-এ থাকার জন্য নিজেদের নম্বর বাড়াতে কি কি কর্মযোগ্য তাঁরা করেছেন সেসবও পোস্ট করতে শুরু করেন ওই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে।
তাই ওই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হওয়ার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে কেউ প্রতিদিন গুড মর্নিং, গুড নাইট ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন তো কোনো কোনো বিধায়ক আবার নিজেরা দিনভর যে সমস্ত কর্মসূচি করছেন সেসবের ছবি এবং বক্তব্য পোস্ট করতে শুরু করেছেন। বিষয়টি দিন কয়েক লক্ষ্য করার পরেই বিধায়কদের কাছে কড়া বার্তা পাঠিয়েছেন গ্রুপের সদস্য পরিষদীয় দলের শীর্ষ নেতারা।
সেখানে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) নির্দেশে তৈরি ওই গ্রুপে বিধায়করা নিজেদের ইচ্ছা খুশি মত কোন পোস্ট করতে পারবেন না। কারণ ওই গ্রুপে শুধুমাত্র দলের নির্দেশ দেওয়া এবং তা গ্রহণ করার কাজ করবে পরিষদীয় দল। তৃণমূলের বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণ অনুযায়ী ওই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরী করা হয়েছিল।
যৌথভাবেই ওই গ্রুপটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস,পরিষদীয় মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এই গ্ৰুপে বিধায়কদের আত্মপ্রচারমূলক পোস্ট করার বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে শীর্ষ নেতৃত্বদের। তারা ওই গ্রুপের মধ্যেই কড়া নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন দল যেভাবে বিধায়কদের নির্দেশ দেবে সেভাবেই চলতে হবে তাদের। মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) নির্দেশে তৈরি ওই গ্রুপে এবার থেকে আর কোন অবাঞ্ছিত বিষয় পোস্ট করা যাবে না।
আরও পড়ুন: আবাস প্রকল্পে আরও কড়া নবান্ন! শুরুতেই প্রভাবশালীদের জন্য বিরাট নির্দেশ
জানা যাচ্ছে, দলের ওই পরিষদীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রয়েছেন তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচিত মোট ২১৬ জন বিধায়ক। এছাড়াও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন এমন ছয় বিধায়ক রয়েছেন সেই গ্রুপে। বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরুর পরেই পরিষদীয় দলের বৈঠক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় বিধায়কদের দলীয় শৃঙ্খলার পাঠ পড়িয়েছিলেন।
ওই বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন কেউই দলীয় শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নন। সব বিধায়ককেই দলের নীতি মেনে চলতে হবে। দল বিরোধী কাজ করলেই শোকজের মুখে পড়তে হবে। যদি কোনো বিধায়ককে পরপর ৩ বার শোকজ করা হয়, তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। সঠিক সময়ে দলের বিধায়কদের কাছে দলীয় নির্দেশ পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে বলেই জানানো হয়েছে।
যদিও অধিকাংশ বিধায়ক সেই নির্দেশ অমান্য করায় বিরক্তি প্রকাশ করছেন দলের এক প্রবীণ সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিজেদের ইচ্ছা মতো হাবিজাবি পোস্ট করা যায় নাকি! বিধায়কদের এটা করা উচিত হয়নি। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্য নিয়েই বিধায়কদের একসুতোয় বাঁধতে ওই গ্রুপটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সেটা দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তাই কোনো বিধায়ক যদি নেত্রীর নির্দেশ বুঝতে না পারেন, তাহলে তাদের কড়া ভাষায় তা বুঝিয়ে দেওয়াই প্রবীণ নেতাদের কর্তব্য। তাই সেটাই করা হয়েছে।’