বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একাধিক সরকারি প্রকল্পে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Government of West Bengal)। এই নিয়ে বহুবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে অন্যতম হল একশো দিনের কাজ (100 Days Work)। এবার এই স্কিমেই দুর্নীতি মামলায় বড় নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে এই মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই এই নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
কী নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)?
একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের তরফ থেকে এই অভিযোগ আনা হচ্ছে। পাল্টা ‘দুর্নীতির তত্ত্ব’ খাঁড়া করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই নিয়ে বাংলায় তদন্তে আসে কেন্দ্রীয় দল। অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী আদালতে দাবি করেন, মোট ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছিল।
গত মার্চ মাসে হাইকোর্টে (Calcutta High Court) একটি রিপোর্ট দিয়ে জানানো হয়, উচ্চ আদালত নিযুক্ত চার সদস্যের কমিটি বিভিন্ন সময়ে হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদা ও দার্জিলিং জিটিএ অঞ্চল পরিদর্শন করে একশো দিনের কাজের টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রমাণ পান। রাজ্যের এই চার জেলা থেকে ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কিছুক্ষণেই শুরু হবে ঝেঁপে বৃষ্টি! দক্ষিণবঙ্গের কোন কোন জেলা ভিজবে? আবহাওয়ার খবর
এদিন শুনানি সময় অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল বলেন, দুর্নীতির জন্যই ২০২২ সাল থেকে একশো দিনের কাজের টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার (Central Government)। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে আবার চিঠি দেয় রাজ্য। যা বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম (Justice TS Sivagnanam) বলেন, যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে কেন্দ্রের সংস্থা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কেউ কেন্দ্রকে আটকাতে পারবে না। এই টাকা প্রকৃত প্রাপকদের দ্রুত বণ্টন করার নির্দেশও দিয়েছে উচ্চ আদালত।
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে (Calcutta High Court) বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ভীষণ উদ্ধত। তারা প্রস্তাব গ্রহণ করছে না। অন্য কেউ কিছু না করলে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিন বছর হয়ে গেল। এই রাজ্যে বহু প্রকল্পে টাকা আসেনি’। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আবার বলেন, কেন্দ্র-রাজ্যের এই ‘লড়াই’য়ে ভুগছে সাধারণ মানুষ। প্রধান বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, ‘যদি কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। এখনও কি সেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?’ রাজ্য তখন জানায়, প্রত্যেক বছর ভোট থাকছে। আগামী বছরও রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। সেই কারণে সব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে! এটা কীসের রাজনীতি? প্রশ্ন তোলে রাজ্য।
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল আবার জানান, রাজ্যকে ১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগের টাকা উদ্ধারও করেছে রাজ্য। তবে সেটা ফেরত দেয়নি। হাইকোর্ট পাল্টা জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা টাকা উদ্ধারের পর কী করেছেন? কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দিয়েছেন নাকি প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে দিয়েছেন?
জবাবে কেন্দ্রের আধিকারিকরা বলেন, এক্ষেত্রে কেন্দ্রের তরফ থেকে যা বলা হবে, তারা সেটাই করবেন। ‘সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে দিতে পারব না’ বলে জানান কেন্দ্রের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুনঃ মহুয়াকে নিয়ে ‘অ্যাকশনে’ মমতা! এরপর হলেই সোজা সাসপেন্ড! সাংসদকে দেওয়া হল ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’
এদিনের শুনানির সময় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, এই প্রকল্পের (Government Scheme) বকেয়া টাকা কেন্দ্র কবে দেবে সেটা দ্রুত জানাতে হবে। আগামী ১৫ মে মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে রাজ্যের উদ্দেশে উচ্চ আদালতের নির্দেশ, জব কার্ড হোল্ডারদের কেন বেকার ভাতা দেওয়া হবে না সেটা পরবর্তী শুনানির দিন জানাতে হবে।
উল্লেখ্য, একাধিক সরকারি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ এনেছে রাজ্য। একশো দিনের কাজের নামও রয়েছে সেই তালিকায়। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে ‘একলা চলো নীতি’ অনুসরণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবার এই স্কিমে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাতেই বড় নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। কেন্দ্র, রাজ্য উভয়কেই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।