সৌতিক চক্রবর্তী,বোলপুর,বীরভূমঃ– বীরভূম জেলার অজয় নদের উপরে অবস্থিত ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ইলামবাজার সেতুটি এখন বেহাল দশা। সেতুর গায়েই লাগানো রয়েছে জেলা শাসকের একটি সতর্কবার্তা বোর্ড। তাতে লেখা,
ছবিঃ- জেলা শাসকের সতর্কতা বোর্ড।
‘সাবধান দূর্বল সেতু। অতি ভারি যানচলাচল সমপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। গতিসীমা ২০ কিমি।’ প্রশাসন এই সেতুটিকে দূর্বল ঘোষণা করার পরেও প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই প্রতিদিন এই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করছে,হাজার হাজা মটরসাইকেল, সাইকেল, ভটভটি ভ্যান,কয়েক টন ওজনের ট্রাক, বাস
ছবিঃ- যাতায়াত করছে ভারি যানবাহন।
ইত্যাদি। জানা গেছে যে,রাজ্যের ৯৫ টি সেতু এখন বেহাল দশায় রয়েছে। এই সকল সেতুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে রয়েছে বীরভূম জেলায় অবস্থিত ইলামবাজারের অজয় নদের ওপর থাকা অজয় সেতুটি। এই সেতুটি বীরভূম জেলার সাথে বর্ধমান জেলার যোগাযোগের অন্যতম লাইফলাইন হলেও বীরভূম থেকে এই সেতুর উপর দিয়ে যেমন বর্ধমান যাওয়া যায় তেমনি পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলিও যাওয়া যায় ও এই সেতুটি কলকাতা যাওয়ার রাস্তার সাথেও যুক্ত।
কিন্তু কেমন রয়েছে এই সেতু! দেখা যাচ্ছে যে, দীর্ঘদিন বেহাল থাকার ফলে ও অতিরিক্ত ভারি যানবাহন চলাচলের চাপে এই সেতুর বুক বরাবর রয়েছে ফাটল।
ছবিঃ- সেতুর বুক বরাবর ফাটল।
সেতুটির রাস্তার মধ্যেই পিচ উঠে বেরিয়ে পড়েছে সেতুটির কঙ্কাল। সেতুর তলায় শ্যাওলার আস্তরণ জমেছে। ভারি যানবাহন পার হলেই কেঁপে উঠছে এই
ছবিঃ- সেতুর মধ্যে ফাটল।
সেতু। এককথায় বলা যায় ইলামবাজারের এই সেতুটি এখন মৃত্যুর ফাঁদ। তবুও মানুষ নিরুপায় হয়েই এই সেতুটির উপর দিয়ে যাতায়াত করছে।
ছবিঃ- ভয়াবহ ফাটল।
এই সেতুটি নির্মাণ হয়েছিল কংগ্রেস আমলে ১৯৬২ সালে। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৫০ মিটার। আর এই ৫৭ বছরেই বেহাল দশায় রয়েছে ইলামবাজারের এই অজয় সেতুটি। এর আগে এই সেতুটি বেহাল দশার জন্য একবার এর উপর দিয়ে যান চলাচল পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফ থেকে। তারপর মেরামতি করে আবার খুলে দেওয়া হয়।
ছবিঃ- সেতুর নীচে জমেছে শ্যাওলা।
এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “সেতুটির অবস্থা খুবই খারাপ। তবুও এই সেতুর উপর দিয়ে অতি ভারি যানবাহন চলাচল করছে। যখন তখন বড়োসড়ো বিপদ ঘটতেই পারে। প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি ও নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার,হাজার লোক যাতায়াত করছে। তবে প্রশাসন শুধু বিজ্ঞপ্তি ও নিষেধাজ্ঞাই জারি করেছে।যানবাহন আটকানোর কোনো ব্যাবস্থা করেননি। আমরা এই সেতুর উপর দিয়ে গেলে খুবই সাবধানে যাতায়াত করি। তবে আমার মনে হয় ওভারলোড বালি, পাথর,কয়লা বোঝাই ডাম্পার গাড়িগুলোই এই সেতুটিকে বেশি ক্ষতি করছে। যদিও পাশে একটা নতুন সেতু নির্মাণ হচ্ছে। এই নির্মাণ কাজটি যাতে তারাতারি শেষ হয় সেইদিকে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।”
ছবিঃ- সেতুর নীচ।
এক অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান,”সেতুটির উপর রুগি নিয়ে চাপলেই ভয় লাগে। এমনকি আর্জেন্ট রুগি নিয়ে বেশি জোরে যাওয়াও যায় না। জোরে গেলেই ঝাঁকানির সৃস্টি হয় এতে রুগির কষ্ট হয়।”
ছবিঃ- পুরোনো সেতুর পাশেই তৈরি হচ্ছে নতুন সেতু।
এই বিষয়ে বীরভূম জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানান,”পুলিশ প্রসাশন থেকে আরম্ভ করে যতটা পারা যায় কন্টোল করা হচ্ছে। ওই জায়গাটা একটা হাইওয়ে জায়গ,বড়ো জায়গা ওখানে হাজার,হাজার গাড়ি পেরোয়। ওটা গতবার আমরা একবারই বন্ধ করেছিলাম। যাতে খুবই অসুবিধা সৃস্টি করেছিলো। ফলে ওখানকার ইঞ্জিনিয়ারেরা ওটা কাজ করেছে। এই অসুবিধার জন্য পাশেই একটা নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। ওটা শেষ হতে আর বেশিদিন লাগবে না। ইতিমধ্যেই অনেক পিলার হয়ে গেছে। আশা করছি সামনের বর্ষাকালের আগেই ওটা চালু হয়ে যাবে।”
ছবিঃ- নতুন সেতুর পিলার।
সেতুটির বেহাল থাকার জন্য প্ৰশাসনের রয়েছে আশ্বাস, কিন্তু মানুষ কতটা আশ্বস্ত সেটাই এখন দেখার।
ছবিঃ- সৌতিক চক্রবর্তী।