জাতপাত থেকে সরস্বতী পুজো! সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের ঝাঁঝালো আক্রমণ সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গতকাল সংসদে বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য রেখেছিলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Saumitra Khan)। এই অধিবেশন চলাকালীন বিরোধীপক্ষ কংগ্রেস,তৃণমূল সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত সাংসদরা জাতপাত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীর মুর্মুর বক্তব্যেরও তীব্র বিরোধিতা করতে শোনা যায় বিরোধীদের।

সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের আক্রমণ শানালেন সৌমিত্র খাঁ (Saumitra khan)

সেই প্রসঙ্গেই সরাসরি রাহুল গান্ধীর নাম নিয়ে এদিন সৌমিত্র খাঁ (Saumitra Khan) অভিযোগ করেন, ‘লোকসভার বিরোধী দল নেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী সহ একাধিক বিরোধী নেতা-নেত্রীরা দেশের জাতপাত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু তারা ভুলে যান এই ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন বিগত দিনে এনডিও সরকার যখন ভারত মাতার সুসন্তান ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন সেই সময় এই জাত-পাত ও ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করা বর্তমান সংসদের বিরোধীদল গুলি বিরোধিতা করেছে।’

সৌমিত্র খাঁ’র(Saumitra Khan) বক্তব্যে এদিন উঠে এসেছে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কথাও। তাঁর কথায়, ‘তারা ভুলে যায় ভারত মাতার আরেক যোগ্য সন্তান মাননীয় শ্রী রামনাথ কোবিন্দ মহোদয়ের নাম যখন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয় তখনও তারা এর বিরোধিতা করেছিলেন এবং তারা এটাও ভুলে যান দেশের বর্তমান মহামহিম রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু মহোদয়ার নাম যখন একই রকম ভাবে এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয় বিরোধীরা তার বিরোধিতা করেছিলেন।’

বিষ্ণুপুরের সাংসদের (Saumitra Khan) কথায় তিনি দেশের দেশের এই সুযোগ্য সন্তানদের জাত বা ধর্ম নিয়ে এই সভায় আলোচনা করতে আগ্রহী নন, কিন্তু তাঁর অভিযোগ বিরোধী শক্তিরা দিনের পর দিন সংসদের কর্মদিবস নষ্ট করে শুধুমাত্র জাত পাতের ভিত্তিতে দেশ বিভাজন করবার চক্রান্ত করে চলেছেন। দেশের মধ্যে চলমান উন্নয়নের কর্মকাণ্ডকে স্তব্ধ করতে চাইছেন তাঁরা। তাই তিনি জানিয়েছেন, ‘বিজেপি তথা এনডিএ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে আরো একবার এই বিরোধী শক্তি দের চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি।’

বিরোধীরা এদিন প্রকাশ্যে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিকশিত ভারতের স্লোগানকেও। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন বিষ্ণুপুরের সাংসদ  বলেছেন, ‘আজকে যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজীর বিকশিত ভারতের স্লোগানকে কটাক্ষ করেন তারা হয়তো দেখতে পান না যে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী আর দিল্লি থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নত সড়ক ব্যবস্থা! তারা দেখতে পান না স্টার্ট অফ ইন্ডিয়া সহ একাধিক কর্ম উপযোগী প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যুবসমাজ কিভাবে কর্মযোগী হয়ে উঠছেন।’

আরও পড়ুন: ১.৯৮ কোটি রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করেই সাশ্রয়! বিরাট লক্ষ্মীলাভ রাজ্যের

প্রসঙ্গত প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে পুণ্য স্নানে যোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে হাজার হাজার তীর্থযাত্রীদের। এই ঘটনাকে হাতিয়ার বানিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গে সৌমিত্র খাঁ বলেছেন, ‘সংসদের এই বিরোধীরা যখন দেশের অন্যতম তীর্থ কেন্দ্র, সারা বিশ্বের কোটি কোটি সনাতনের আস্থার কেন্দ্র প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত ১৪৪ বৎসর পর মহাকুম্ভের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তখন তাঁরা হয়তো ভুলে যান এই মহাকুম্ভের মহাযজ্ঞে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোটি কোটি সংখ্যায় সনাতনীরা একবার পুণ্য স্নানের জন্য জমায়েত হচ্ছেন।’

এরপরেই সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজো চলাকালীন সামগ্রিকভাবে একটি পুজো মন্ডপ বন্ধ করে দেওয়ায়, সেখানে মাত্র ২ লক্ষ দর্শনার্থী জমায়েত করেন।’ প্রসঙ্গত সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে এবছর উত্তাল হয়েছে বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উঠে এসেছে অভিযোগ।

বিশেষ করে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কলেজ যোগেশচন্দ্রে নজিরবিহীনভাবে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ পাহাড়ায় সরস্বতী পুজো করতে হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেন গতকাল সৌমিত্র (Saumitra Khan) বাবু বলেছেন, ‘আজ যখন বসন্ত পঞ্চমীর সময় আমরা এই বাজেট অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছি,সারা ভারতবর্ষের সনাতনীরা যেসময় বিদ্যার দেবী, দেবী সরস্বতীর আরাধনায় মগ্ন, ঠিক সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে সরস্বতী পুজো বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং একটি সরস্বতী পুজো পরিচালনা করবার জন্য কলকাতা হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।’

বিরোধীদের একহাত এদিন তিনি আরও বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় একাধিক স্কুলে, কলেজে পুলিশ নামিয়ে, কমব্যাট ফোর্স নামিয়ে সরস্বতী পুজো করা হচ্ছে। আমার সহকর্মী বিরোধী সাংসদরা হয়তো দেখতে পাচ্ছেন না, সামান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠি ও বন্দুকের বলের সামনে ছোট ছোট কচি-কাচাদের বাগদেবীর বন্দনায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে।’

Saumitra Khan Howrah Bankura route Indian Railway

এখানেই শেষ নয় একইসাথে পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রসবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সময়ে ভারতবর্ষের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক সীমানা আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সাথে জুড়ে রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্থানে জমির অভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই স্থানগুলি দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকে গিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং দেশজুড়ে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশের এই সামগ্রিক উন্নয়নকে যথাযথ করতে আমাদের দেশের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারকে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবার প্রয়োজন আছে।’

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর