বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গ্রামবাংলার ভোট ঘিরে তোলপাড় রাজ্যজুড়ে। গতকালই কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Force) নিয়ে হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে এই ইস্যুতে এবার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ফের সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) যেতে পারে রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন (WB Election Commission)। এই আশঙ্কা থেকেই আগেভাগে ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ সহজে মানবে না রাজ্য। যেতে পারে শীর্ষ আদালতে। এমনটাই আশঙ্কা বিজেপি-র। আর তাই শীর্ষ আদালত যাতে একতরফা ভাবে রাজ্য ও কমিশনের বক্তব্য শুনে কোনও নির্দেশ যাতে না দেয়, তার জন্যই সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল নন্দীগ্রামের বিধায়কের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্যাভিয়েট এক ধরনের আইনি নোটিস। এটি আদালত বা পাবলিক অফিসারের কাছে দাখিল করা যায়। ক্যাভিয়েটের ক্ষেত্রে ক্যাভিয়েট দাখিল করা ব্যক্তির আবেদন না শুনে, অন্য পক্ষের আর্জি নিয়ে এগনো সম্ভব হয়না।
প্রেক্ষাপট: কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত মামলা উঠলে গত ১৩ জুন রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার কথা নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনা করে দেখতে বলে আদালত। তবে এর পরেই ১৫ জুন ফের নির্দেশ দিয়ে বলা হয় গোটা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করতে হবে। তার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে রাজ্যকে জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমাও বেঁধে দেয় আদালত।
কিন্তু আদালতের নির্দেশ না মেনে সেই সময়সীমার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে যায় কমিশন। তবে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। কোর্টের নির্দেশের পর কার্যত চাপে পড়ে পঞ্চায়েত ভোটে জেলাপ্রতি মাত্ৰ ১ কোম্পানি কেন্দ্ৰীয় বাহিনী চেয়েছে কমিশন। যেখানে একদফায় গোটা রাজ্যে এত বড় নির্বাচন, সেখানে ১ কোম্পানি কেন্দ্ৰীয় বাহিনী দিয়ে কতটা নিরাপত্তা, সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব! গতকাল এই প্রশ্নই ওঠে আদালতে।
ভোটের আগে ১৫ দিনে ৮ মৃত্যু, তাও বাহিনীতে অনীহা কমিশনের! কেন এহেন আচরণ, এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ও কমিশন।
আদালতের নির্দেশের পরেও কেন কেন্দ্রীয় বাহিনীতে অনীহা কমিশনের, এর পেছনে কারণ কী! কার্যত এইসকল প্রশ্নেই বিদ্ধ রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল তা বাস্তবায়িত করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং কমিশনার ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করে আদালত।
এদিনের শুনানিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি বলেন,’ কমিশন সক্রিয় নয়, তাই কোর্টের নির্দেশ মানতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না।’ বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘কোর্টের নির্দেশ কার্যকর না করতে সব পদক্ষেপ করছে কমিশন। ২০১৩-য় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য এই কমিশন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছি না সেই কমিশনের স্বতন্ত্রতার কী হল?’
বিচারপতি আরও বলেন, ‘কোর্টের নির্দেশ ছিল গোটা নির্বাচন পর্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা কমিশনের উপরেই মূল্যায়নের ভার ছেড়েছিলাম। ১৭০০ না ৮ লক্ষ বাহিনী-সেটা ঠিক করা কী আদালতের কাজ? প্রাথমিকভাবে এই কেন্দ্রীয় বাহিনী অপর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে। মানুষ প্রশাসনের উপর আস্থা হারালে ভোট করে লাভ কী? আমাদের কি কমিশনের নিরপেক্ষতায় সন্দেহ করা উচিত?’’
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির রোষের মুখে পড়েন নয়া রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। তাকে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে না পারলে পদ ছেড়ে দিন কমিশনার। না পারলে পদ ছাড়ুন, নতুন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাজ্যপাল। ‘