বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বরাবরই ঠোঁটকাটা বলে পরিচিত বঙ্গ বিজেপির নেতা তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। কখনও বিতর্কিত পোস্ট করে, আবার কখনও দলেরই নেতাদের বিরুদ্ধে পোস্ট করে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। বিজেপির রাষ্ট্রীয় মহাসচিব কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও ওনার তোপের মুখ থেকে বাদ যাননি। মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার পর তথাগতবাবু একটি পোস্ট করে তৃণমূল নেত্রীকে আবেদন করেছিলেন যে, মুকুল রায়ের বন্ধু কৈলাস বিজয়বর্গীয়কেও যেন তৃণমূলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে বাংলার অভিনেত্রী তথা বর্তমানে তৃণমূলের যুব সংগঠনের সভাপতি সায়নী ঘোষের সঙ্গেও তিনি তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এছাড়াও বঙ্গে বিজেপির পরাজয়ের পর কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য বিজেপির নেতাদের তুলোধোনা করতে পিছপা হননি তিনি। আর এই কারণে ওনাকে একবার দিল্লীতেও তলব করা হয়েছিল। নিজেই টুইট করে এই কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তবে, দিল্লী থেকে ওনাকে তলব করার পরেও দলীয় নেতাদের সমালোচনা বন্ধ করেন নি তিনি। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকেও বিভিন্ন ইস্যুতে আক্রমণ করেন তথাগত রায়।
আর এরই মধ্যে তথাগত রায়ের একটি ফেসবুক পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। ওই পোস্টে তথাগতবাবু পাত্রের জন্য তৃণমূল নেতার মেয়ে খুঁজছেন। এদিন সকালে তথাগতবাবু নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট করে লেখেন, ‘ পাত্রী চাই – তৃণমূল নেতার মেয়েকে আমি আমার ছেলের বিয়ে দিতে চাই । তবে তৃণমূল নেতার মেয়ের সঙ্গে । কারণ আমার ছেলে যথেষ্ট শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও এখনো চাকরি পাইনি । তবে চাকরি পেয়ে যাবে । স্কুল-টিচারের জন্য SSC পরীক্ষা দিয়ে ‘সিলেক্ট’ হয়েও আজও ‘ওয়েটি়ং-লিস্টে’ পড়ে রাস্তায় বসে আছে । আমার ছেলের তাই ধারণা ও যদি কোন তৃণমূল নেতার মেয়েকে বিয়ে করতে পারে , তবে ওর সেই চাকরিটা হবে । আমি বললাম, সে নয় বুঝলাম । মেয়ের বাবা যখন তোকে জিজ্ঞেস করবে , ‘চাকরিটা যদি শেষ পর্যন্ত না হয় , তখন আমার মেয়েকে বিয়ে করে কি ভাবে চালাবে ?’ আমার ছেলে সহাস্যে উত্তর দিল , ‘সে তুমি আমার উপরে ছেড়ে দিও , আমি উত্তর দেব ।’
তথাগতবাবু আরও লেখেন, ‘ যথাসময়ে আমারই পাশের ওয়ার্ড থেকে এক তৃণমূল নেতা তার মেয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আমার ছেলেকে দেখতে এল । আমার বাড়ি ঘর এবং আমার ছেলেকে দেখে তার পছন্দও হয়ে গেল । এবার স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রশ্নটা এল । যদি চাকরি আদৌ না হয় , তখন তার মেয়েকে আমার ছেলে কিভাবে খাওয়াবে ? ইত্যাদি ।উত্তরটা এবার আমার ছেলেই দিল । সে খুব স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিয়ে বলল , –‘ স্যার, এখন ‘ফ্রি’তে রেশন পাচ্ছি, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড আছে ‘ট্রিটমেন্টের’ খরচ নিয়ে কোন চিন্তা নেই , কিছুদিনের মধ্যেই যুবশ্রীর টাকা পাব, 100দিনের কাজ যদি ম্যানেজ করতে পারি, আর আপনার মেয়ে বছরে কন্যাশ্রীর ১০০০টাকা পাবে , আর বিয়ের জন্য যে রূপশ্রীর ২৫ হাজার টাকাটা পাবে — তাই দিয়ে বাকি জীবনটা আমরা ভালোভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবো । তাছাড়া মাথার উপরে আমাদের মানে আপনার দিদি তো আছেন ।। আমি বাপের একমাত্র ছেলে । বাড়িঘর সব আছে । চাকরি না পেলেও কি আমার কোন অসুবিধা হবে ? আপনি কী বলেন ?’ মেয়ের বাবা তৃণমূল নেতা আর একটিও কথা না বলে মাথা নিচু করে চলে গেলেন । ”
শেষে তথাগত রায় লেখেন, ‘ আমার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়েটা দিলেন না । আমি শুধু ভাবছি আমার ছেলে তো দিদির দলের নেতার কাছেই দিদির দলের ভালো ভালো কাজের কত প্রশংসা করল । তাও আমার ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলো না ! এখন রাস্তা-ঘাটে আমার সাথে সেই নেতার দেখা হলে আর কথা বলেন না । আমার ছেলে যে কি ভুল বলল , বুঝতে পারছি না।”
তবে এই লেখনীটি যে ওনার নিজের না সেটাও তিনি নিজের পোস্টে স্বীকার করেছেন। তিনি এই গল্পটিকে একটি ‘অনুগল্প” এবং শেষে লিখেছেন ‘সংগৃহীত”। তিনি এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে, গল্পটি কাল্পনিক এবং অন্য কারও থেকে তিনি নিয়েছেন। তিনি এই গল্পের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, বর্তমানে বাংলার বেকার ছেলেদের তৃণমূল নেতার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করা ছাড়া আর উপায় নেই।