মালদহকাণ্ড নিয়ে রাস্তায় বিজেপি মহিলা মোর্চা, ‘লজ্জার ভিডিয়ো’ ভাইরাল না করার অনুরোধ

বাংলা হান্ট ডেস্ক : মণিপুরের দুই মহিলাকে উলঙ্গ করে ঘোরানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছে গোটা দেশের রাজনীতি। ন্যক্কারজনক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা শোনা গিয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Manipur) কণ্ঠেও। এই হিংসার ঘটনায় অনেক আগে থেকেই বিরোধীদের সমালোচনায় বিদ্ধ মোদী সরকার। গত শুক্রবারও ২১ জুলাই ধর্মতলার মঞ্চ থেকে বিজেপির (BJP) প্রতি তীব্র কটাক্ষ শানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই ঘটনার মধ্যেই বাংলার দু’টি ঘটনা নিয়ে পাল্টা ময়দানে বিজেপি। হাওড়ার পাঁচলার পাশাপাশি মালদহের (Malda Issue) একটি ভিডিও (Viral Video) নিয়ে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। রবিবার ঐ বর্বোরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে মালদহের পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভ চালান মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। আর এবার নজর কলকাতা। সূত্রের খবর, আগামী বুধ এবং বৃহস্পতিবার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় এলাকায় ধর্না কর্মসূচি নেবে মহিলা মোর্চা (Mahila Morcha)।

এদিকে তৃণমূলের দাবি একটি স্থানীয় চুরির ঘটনায় রাজনীতির রঙ লাগাতে চাইছে বিজেপি। যদিও ভাইরাল ভিডিওটি অন্য কথা বলছে‌। অপরদিকে বিজেপির দাবি, হাওড়ার পাঁচলা ঐ মালদহের বামনগোলার যে ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, তা থেকেই স্পষ্ট এই রাজ্যে নারীদের সম্মান কোথায়? রাজ্য বিজেপির পাশাপাশি বিষয়টা নিয়ে সরব হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারাও। সেখান থেকেও লাগাতার টুইট আসছে।

বিষয়টির নিন্দা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট থেকে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা চাই এর বিহিত হোক। সেই কারণেই আমরা কলকাতায় ধর্নায় বসতে চলেছি। স্থান এবং দিন এখনও চূড়ান্ত না হলেও কর্মসূচি হচ্ছেই। বাংলা যে গোটা দেশের কাছে লজ্জার কারণ হয়ে উঠেছে, তা সকলের সামনে তুলে ধরা দরকার।’’

ফাল্গুনী পাত্র আরও বলেন, ‘‘এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা। তার পরেও এখানে মহিলাদের উপরে অত্যাচার নিয়ে সরকার চুপ।’’ তিনি জানিয়েছেন, মোর্চার ধর্না মঞ্চের পাশেই রাজ্যের সমস্ত নির্যাতিতা মহিলাদের ছবি টাঙানো হবে। তিনি বলেছেন ন, ‘‘আমরা চাই না এই ধরনের ভিডিয়ো ভাইরাল হোক। নারীর লজ্জা মানে সমাজের লজ্জা। আমাদের কর্মীদেরও বলব এই ধরনের বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ হোক, আইনি পদক্ষেপ হোক কিন্তু ভিডিয়ো ভাইরাল করে বাংলার লজ্জা, বাংলা মায়ের লজ্জা বাড়াবেন না।’’

এই বিষয়ে ইংলিশ বাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্রও সরব হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বামনগোলার পাকুয়াহাটেও ঘটনা তো একটা উদাহরণ। এমনটা রোজই ঘটছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহিলাদের উপরে অত্যাচার হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরেও এই রাজ্যের মহিলা, শিশু কেউ শাসকের অত্যাচার থেকে বাঁচেননি। এর সুরাহার জন্য সকলের বিষয়টা জানা উচিত। তবে আমি মনে করি, মহিলাদের বিবস্ত্র করার ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়া উচিত নয়। লজ্জার অংশ ঢেকে তবেই তো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা উচিত। না হলে গোটা সমাজটাই বিষিয়ে যাবে।’’

bjp

পাশাপাশি দিল্লির মাটিতে গিয়ে হুগলির সাংসদ লকেট কার্যত কেঁদেই ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন সমাজমাধ্যমে সব কিছুই ছড়িয়ে পড়ে। আটকানো খুবই কঠিন। আবার এটাও ঠিক যে আজকাল মানুষ প্রমাণ হিসাবে ভিডিয়ো চান। পাঁচলার ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংবাদিক বৈঠকেই আমাকে বলা হয়, ভিডিয়ো কোথায়? তা হলে কি এক জন মহিলাকে সম্মানহানি হওয়ার প্রমাণ দিতে ভিডিয়ো তোলার ব্যবস্থাও করে রাখতে হবে? কোনও সভ্য সমাজে কি এমন প্রশ্ন উঠতে পারে?’’

Moumita Mondal
Moumita Mondal

মৌমিতা মণ্ডল, গ্র্যাজুয়েশনের পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত। প্রায় ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর