বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একুশের নির্বাচন শেষে সারা বাংলা জুড়ে এখন ঘাসফুলের জয়জয়কার। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতেও ২১৩ আসন ছিনিয়ে নিয়ে ফের একবার ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই অবস্থাতেও বেশকিছু বিধানসভায় কঠিন চ্যালেঞ্জ দিয়েছে বিজেপি। এবং অনেকেই যারা জিতেছেন তারা কেউই তেমন পরিচিত মুখ নন। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অনেকেই ময়দানে পা রেখেছেন প্রথমবার। স্বামীর সাথে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাওয়া চন্দনা বাউরি তাদের মধ্যে অন্যতম। বাঁকুড়ার শালতোড়া থেকে এবার তাতেই বিধানসভা নির্বাচনের সৈনিক করেছিল বিজেপি। নির্বাচনের মূল্যও দিয়েছেন তিনি, বিপুল এই তৃণমূলী হাওয়াতেও হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা সন্তোষ মন্ডল কে প্রায় চার হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন চন্দনা।
কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে এরপর থেকেই। নির্বাচনের পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে শুরু হয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসা। যার ফলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন অনেক বিজেপি বিধায়কই। বাধ্য হয়ে নিজেদের অসুবিধার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন তারা। সাড়াও দিয়েছে কেন্দ্র। সর্বক্ষণ পাহারা দেবার জন্য মিলেছে চারজন নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু নিজেই যার দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা তিনি চারজন নিরাপত্তারক্ষীকে সামলাবেন কি করে। ভোটের আগে পর্যন্ত চার জনের পরিবারের পেট ভরতে স্বামী-স্ত্রী রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যেতেন চন্দনা। কিন্তু ভোটে জেতার পর এখন স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ সেই কাজ। অন্যদিকে মাটির ঘর তাদের। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার জন্যও ব্যবস্থা করতে হবে! একটি প্রতিবেশীর নির্মীয়মান বাড়ি রয়েছে কিন্তু আবার দরজা-জানলা নেই।
ফলতো নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার জন্য নিজেদের জন্য রাখা একটি দরজা এবং দুটি জানলাই এখন সেই বাড়িতে লাগিয়ে দিয়েছেন চন্দনার স্বামী। অন্যদিকে রান্নার কাজ করছেন চন্দনা। সবমিলিয়ে নিরাপত্তার অভাব যেমন ছিল এক বড় আশঙ্কা তার বদলে নিরাপত্তারক্ষীদের রাখাও হয়ে উঠেছে এক বড় সংকট।
ভোটের আগে দিনমজুর চন্দনা হয়তো ভাবতেও পারেননি চাপে এতটা বেড়ে যাবে তার উপর। তিনি জেতার পর প্রশংসার ঝড় বয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। টুইট করেছিলেন তাবড় তাবড় বিজেপির নেতারাও। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই সাদা হাতি পোষা হয়ে গিয়েছে চন্দনার কাছে। চন্দনা জানান, “জওয়ানদের রাখার মতো ঘর তো আমাদের নেই।” এখন বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহারের জন্য ফের একবার আবেদন করেছেন তারা।
একই অবস্থা সোনামুখীর বিধায়ক দিবাকর ঘরামি, মালদহের গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন ও কোচবিহারের বিধায়ক মালতী রাভা রায়েরও। প্রথমে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য চাইতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু সঙ্গতি নেই অনেকেরই। কেউবা কাজ করেন ইনসিওরেন্স কোম্পানিতে, কেউবা চন্দনার মতোই দিনমজুর। এখন তাদের পক্ষে নিরাপত্তারক্ষীদের পরিচর্যা করাটাই হয়ে উঠেছে বড় দায়। সেই কারণেই শেষপর্যন্ত নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন তারা।