বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় মনমতো ফল করতে পারেনি বিজেপি। বরং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের একবার ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কানাঘুষো ছিল নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে কোটি কোটি টাকা ঢেলেছে বিজেপি। তবে জয় নিশ্চিত না হলেও, এবার সেই খরচের হিসেব-নিকেশ করতে বসে রীতিমতো চোখ ছানাবড়া রাজ্য বিজেপির। আদতে যত টাকা পাঠানো হয়েছে তত টাকা নাকি খরচই হয়নি নির্বাচনী রণনীতিতে। সামনাসামনি স্বীকার না করলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে টাকার ভূমিকা যে অনেকটাই, তা কার্যত মেনে নিতে হয় সকলকে।
তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, নির্বাচনের জন্য রাজ্য বিজেপি আদতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছে তার অনেকটাই ঢুকে গিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের পকেটে। আর তারা অনেকেই এখন পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্যে। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর দক্ষিণ কলকাতার তিনটি আসন ভবানীপুর, বেহালা পূর্ব এবং বেহালা পশ্চিমে জয় নিশ্চিত করতেই খরচ হয়েছিল প্রায় চার কোটি টাকা। এই তিন কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী ছিলেন, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী পায়েল সরকার। প্রত্যেক কেন্দ্রেই অবশ্য জয়লাভ করেছে তৃণমূল। একদিকে যেমন জিতেছেন শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, অন্যদিকে তেমনি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং রত্না চ্যাটার্জী জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে।
কিন্তু এই আসনগুলিতে খরচের বহর শুনে রীতিমতো চমকে যাবে যে কেউ। বিজেপি সূত্রে খবর, তিন তারকা প্রার্থীর প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছিল ৩০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি অমিত শাহ জেপি নাড্ডা এবং মিঠুন চক্রবর্তীর রোড শোয়ের জন্য খরচ হয়েছে গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া বিধানসভা ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে ১০ লক্ষ, প্রত্যেক বুথ সভাপতির হাতে চার হাজার টাকা হাত খরচা, জেলা কমিটির সদস্য সহ একাধিক নেতার জন্য গড়ে ১০ লক্ষ টাকা, ভিন রাজ্যের নেতাদের থাকা-খাওয়া মিলিয়ে প্রায় মাসে দু লক্ষ টাকা, গাড়িবাবদ ব্যায় ৫ লক্ষ টাকা, ছোট ছোট জনসভায় প্রায় ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ মিলিয়ে হিসেবের ফর্দ আকাশ প্রমাণ লম্বা হয়ে পড়েছে।
যদিও কাজ হয়নি তেমন কিছুই। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত জিতে নিতে পেরেছে ঘাসফুল শিবির। আর তাতেই এখন মাথায় হাত রাজ্য বিজেপির। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিনেত্রী পায়েল সরকার এবং শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জানা গিয়েছে এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করেননি তারা।
অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ অবশ্য জানান, “এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। দিল্লি থেকে প্রতিটি বিধানসভার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচন সংক্রান্ত টাকা তারাই খরচ করেছেন এবং হিসেবে রেখেছেন। নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে যেটুকু টাকা আমায় দেওয়া হয়েছে তার প্রতিটি পাই পয়সার হিসেব আমি জমা করেছি।”
নির্বাচন শেষে এমনিতেই কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে, বিজেপি সংগঠনের মধ্যে অনেকেই দোনামোনা করছেন। অনেকেই ইতিমধ্যেই ফের একবার দলবদলের সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। এমতাবস্থায়, নির্বাচনী খরচের হিসাব-নিকাশ করতে গিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়লেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।