বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) গাঁজা সেবনকারীদের সংখ্যা কত? জানতে চেয়ে এবার কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। দেশের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের কাছে এই তথ্য জানতে চেয়েছেন সৌমিত্র বাবু। কেন্দ্রের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে গাঁজাখোরদের সংখ্যা কত? এবং জেলাভিত্তিক কত সংখ্যক গাঁজাখোর রয়েছে সেই তথ্যও জানতে চেয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) ‘গাঁজাখোরের’ সংখ্যা কত?
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ‘নেশা মুক্ত ভারত অভিযান’ শুরু করা হয়েছে। সেই অভিযান বাংলায় (West Bengal) কতটা রূপায়িত হয়েছে তা জানতেই এবার এই তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন সৌমিত্র খাঁ। তবে শুধু গাঁজা নয় সব রকমের মাদকাসক্তের বিষয়ে খোঁজ নিতে চান বিষ্ণুপুরের এই সাংসদ। তাঁর প্রশ্নে মূলত তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রথমত তিনি জানতে চেয়েছেন জেলাভিত্তিক পশ্চিমবঙ্গের মাদকাসক্তদের সংখ্যা কত? দ্বিতীয়ত পশ্চিমবঙ্গে মাদকের নেশা রুখতে কি কি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করা হয়েছে? এবং তার কেমন প্রভাব পড়েছে? তৃতীয়ত মাদকাসক্তদের নেশা মুক্তি তাদের পুনর্বাসন এবং মাদকবিরোধী প্রয়াসের পরিস্থিতি বাংলায় কেমন? সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
মাদকাসক্তদের যে পরিসংখ্যান এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে তা থেকে একথা স্পষ্ট যে রাজ্যে (West Bengal) মাদকাসক্তদের একটা বড় অংশই গাঁজাখোর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত ডিসেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের মাদক কারবারের যে হিসাব পেশ করেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে বাজেয়াপ্ত হওয়া মাদকের মধ্যে গাঁজার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। শুধু তাই নয় বাজেয়াপ্ত হওয়া গাঁজার পরিমাণ আফিম, হেরোইন, কোকেন, চরস-সহ অন্য সব ধরনের মাদকের সম্মিলিত পরিমাণের সাড়ে ছ’গুণ।
২০১৮-১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এই তথ্য পেশ করেছিল অমিত শাহের মন্ত্রক। সেবছর পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) গাঁজা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ২৭ হাজার কেজির বেশি। আর বাকি সব মাদক মিলে উদ্ধার হয়েছিল চার হাজার কেজির একটু বেশি। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের মাদকাসক্তদের মধ্যে গাঁজাখোরদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
সৌমিত্র খাঁ নিজেও একথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আমি যাঁদের হিসেব চেয়েছি তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আসলে গাঁজার নেশা করেন একথা ঠিক। তবে সব রকমের মাদকাসক্তদের বিষয়েই জানতে চেয়েছি।’ কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই গাঁজাখোর বা মাদকাসক্তদের খোঁজ নিচ্ছেন তিনি? জবাবে সৌমিত্র বাবু জানিয়েছেন, এই সমস্ত নেশা থেকে মানুষকে দূরে রাখতে চান তিনি। তার জন্য প্রয়োজন নজরদারির। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি কতটা রয়েছে এবং নজরদারিতে কি কি তথ্য উঠে এসেছে তা জানতে পারলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
সাংসদ আরও জানিয়েছেন, ‘যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন,তারা সাধারণত নির্দিষ্ট কোন দোকান থেকেই মদ কেনেন। সপ্তাহে কত মদ বিক্রি হচ্ছে, কারা আসছেন কিনতে, কতটা কিনছেন সেই সমস্ত তথ্য বিশদে পাওয়া গেলে তবেই মদ্যপানের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনার সম্ভব।’ তিনি মনে করেন নজরদারি থাকলে সেই তথ্য প্রশাসনের হাতে থাকবে।
আরও পড়ুন: ২৮ ফেব্রুয়ারি.., কলকাতা হাইকোর্টের কর্মকান্ডে রেগে আগুন সুপ্রিম কোর্ট! এবার বড় নির্দেশ
প্রশ্ন উঠছে যারা মদ্যপান করে না, গাঁজা,চারস,কোকেন বা অন্যান্য মাদকে আসক্ত তাদের উপর নজরদারি চালানো হবে কীভাবে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দিতে না পারলেও বিষ্ণুপুরের সাংসদ জানিয়েছেন, ‘এইসব নেশা এলাকাভিত্তিক ভাবে বেশি বা কম হয়ে থাকে। কিছু কিছু এলাকার ওপর নজরদারি বাড়ালেই পরিস্থিতি বোঝা যেতে পারে। তাই জন্যই তথ্য চাইছি।’ একই সাথে তিনি জানিয়েছেন, ‘নেশা মুক্ত ভারত অভিযানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা পাঠাচ্ছে তার কতটা সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে সেই সব তথ্য-ও জানতে চাই। পুরো তথ্য এলে তবেই বোঝা যাবে জেলায় জেলায় বা এলাকা ভিত্তিক ভাবে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক।’
বিজেপি সাংসদের এই প্রশ্নকে কীভাবে দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব? এ প্রসঙ্গে রাজ্য (West Bengal) বিজেপির মুখপাত্র তথা বিজেপি সংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘জেলায় জেলায় তৃণমূলের উন্নয়ন বাহিনীর মুখ থেকে ঝর্নাধারার মতো যে ধরনের বাণী বেরিয়ে আসছে, তা দেখেই হয়তো গঞ্জিকার প্রভাবের কথা সৌমিত্রর মাথায় এসে থাকতে পারে। সেই কারণেই হয়তো তিনি ওই প্রশ্ন জমা দিয়েছেন।’