বিহারের রাজনীতিতে দুর্দান্ত চাল বিজেপির! নীতিশ-তেজস্বীর বিরুদ্ধে তৈরি গেরুয়া শিবিরের মহাশক্তিজোট

বাংলা হান্ট ডেস্ক : বিহারে (Bihar) চলছে রাজনৈতিক মহারণ। ঠিক যেন দাবার বোর্ডে। এক একটা চালেই প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে পরিস্থিতি। বোর্ডের একদিকে রয়েছে সদ্য পদ্ম শিবিরের সঙ্গে সংসার ভাঙা নীতিশ কুমার (Nitish Kumar), সঙ্গে তার জোটসঙ্গী লালুপুত্র তেজস্বী যাদব। আর অপরদিকে তাঁদের যুযুধান বিপক্ষ শাহ-মোদি জুটির বিজেপি (BJP)। ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লা কখনও এদিকে ঝুঁকছে তো কখনও ওদিকে।

নীতিশ কুমারের মোহভঙ্গ হওয়ার পর বিহারে বেশ কিছুটা কোনঠাসা বিজেপি। বিরোধীদের দাবি, বাংলার মতো সিবিআই ইডি দিয়ে নীতিশ-তেজস্বীর স্বপ্নের সংসারে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেও খুব একটা হালে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের দুই দলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছেন প্রশান্ত কিশোর। তিনি মাঝেমধ্যেই দেখা দিয়ে বিজেপি-আরজেডি-জেডিইউকে খানিক কটাক্ষ করে হাওয়া গরম করে দিয়েই আবার মিলিয়ে যাচ্ছেন।

এতকিছুর মধ্যে স্থির রয়েছে কিন্তু বিজেপি। ইডি-সিবিআই দিয়ে একটু চাপে রেখেছে নীতিশ-তেজস্বী জুটিকে। আর দাবার বোর্ডের ঘোড়ার সন্ধান ইতিমধ্যেই পদ্ম শিবির পেয়ে গিয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। পদ্মের ঘোড়া রবীন্দ্র কুশওয়াহা।

বিহারে বিজেপি রাজনীতি করছে মূলত নিরাপত্তা নিয়ে। প্রথমেই জেড নিরাপত্তা দেওয়া হল লোক জনশক্তি পার্টি প্রধান চিরাগ পাসওয়ানকে। বাবা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর চিরাগই এলজেপির ভবিষ্যৎ তা গেরুয়া শিবির জানে। প্রথমে চিরাগকে দেওয়া হয় ওয়াই নিরাপত্তা। পরে সেটি বৃদ্ধি ঘটিয়ে করা হল জেড নিরাপত্তা। অর্থাৎ চিরাগের সঙ্গে এখন প্রতি মুহুর্তে ২২ জন নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন থাকবে। এর সাহায্যে এলজেপির ভোট বাক্সে থাকা ৭ শতাংশ ভোট নিজেদের খাতায় জমা করতে চাইছে বিজেপি। কারণ সামনেই লোকসভা নির্বাচন।

এরপর বিজেপির তুরুপের তাস হলেন, মুকেশ সাহানি। বিকাশশীল ইনসান পার্টির প্রধান মুকেশকে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। মোট ১১ জন নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকবেন মুকেশ সাহানি। কিন্তু মুকেশই কেন লক্ষ্য গেরুয়ার। তার প্রধান কারণ হল মাল্লাহ ভোট ব্যাঙ্ক। বিহারের বেশ বড় একটা অংশ হল এই মাল্লাহ উপজাতি। আর তাঁদের প্রতিনিধি হিসাবেই জাতীয় রাজনীতিতে পা রেখেছেন মুকেশ সাহানি। মুকেশকে নিরাপত্তা দিয়ে পুরো মাল্লাহ ভোটকেই কুক্ষিগত করার ফন্দি করেছে পদ্ম শিবির।

bihar 4

নিরাপত্তার রাজনীতিই কেন? গোটা ভারতে নিরাপত্তা প্রাপ্তি নিয়ে একটা আলাদাই উন্মাদনা রয়েছে। আর সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। বাংলার বুকেও অর্জুন সিং এবং শুভেন্দু অধিকারীকে সরকারি নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু অর্জুনের তির লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। মাঝপথেই পদ্মবন থেকে ঝাঁপ মারেন ঘাসফুলে। তখনই তাঁর নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়া হয়। অযথা খরচা করার লোক অমিত শাহ নন। অর্জুন খানিক চেঁচামেচি করলেও, লাভ হবে না বুঝে মুখ বন্ধ করে নেন। বিহারে এই নিরাপত্তা নিয়ে পাগলামিটা সপ্তম পর্যায়ে রয়েছে। যার নিরাপত্তা যত বেশি, তার সম্মানও ততই বেশি। আর এই আবেগকেই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে বিজেপি।

আগেই বলা হয়েছে, এই মহারণে বিজেপির ঘোড়া কিন্তু রবীন্দ্র কুশওয়াহা। কিছুদিন আগেই এআইএমএস-এ চিকিৎসা করানোর নাম করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মোলাকাত করে এসেছিলেন। তারপরই নীতিশের সঙ্গ ত্যাগ করে নিজের নতুন রাজনৈতিক দল গড়েছেন। এরপর আসরে নেমেছেন বিহারের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আরসিপি সিং। আগের বছর পর্যন্ত বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন তিনি। আরসিপি সিং-এর মাধ্যমে আবারও বিহারের নিম্নবর্গের ভোট টানতে চাইছে বিজেপি। এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় জয়সওয়ালের সঙ্গে আলোচনা হয়ে গিয়েছে উপেন্দ্র কুশওয়াহা।

তাহলে ছবি কী দাঁড়াল? একদিকে রয়েছে বিহারের শাসক দল নীতিশ কুমার ও তেজস্বী যাদব জোট, এবং, দাবার বোর্ডের অপর দিকে রয়েছে বিজেপি, যাকে সমর্থন করবেন রবীন্দ্র কুশওয়াহা, চিরাগ পাসওয়ান এবং মুকেশ সাইনি। বলা ভালো, এরাই বিজেপির ঘোড়া, গজ এবং নৌকো। এদেরকে পিছন থেকে চালনা করছেন ‘মন্ত্রী’ অমিত শাহ এবং সুরক্ষা বলয়ে রয়েছেন ‘রাজা’ নরেন্দ্র মোদি। এবার দেখার শেষ পর্যন্ত কিস্তি মাৎ করবেন কে?


Sudipto

সম্পর্কিত খবর