বাংলাহান্ট ডেস্ক: চলতি বছর মিলিয়ে মিশিয়ে কাটল ভারতীয় জনতা পার্টির (Bharatiya Janata Party) জন্য। কয়েকটি রাজ্যে যেমন নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফিরেছে তারা। তেমনই আবার কয়েকটি রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে। বাইশের হিমাচল প্রদেশ নির্বাচনে যেমন কংগ্রেসের ছন্দপতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এই মুহূর্তে দেশের ১৭ রাজ্যে নিজস্ব বা জোট সরকার রয়েছে বিজেপি-র। কিন্তু ১৩টি রাজ্যে বিরোধীরা ক্ষমতায় রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে কোনও দলেরই সরকার নেই।
চলতি বছরে বিজেপি প্রথম ধাক্কা খায় বিহারে। অগস্টে নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ বিজেপি-র এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে যায়। তারা লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন জনতা দলের সঙ্গে জোট করে সরকার গড়ে বিহারে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিপাকে পড়ে বিজেপি।
উল্লেখ্য, বিহারের বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালে। সেখানে এনডিএ জোট জিতে যায়। বিজেপি-র হাতে বেশি বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও নীতিশ কুমারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয় তারা। কিন্তু নীতিশ এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় বিজেপি এখন সে রাজ্যের বিধানসভায় একমাত্র বিরোধী দল। বাকি সাতটি দলের মহাজোটের মাধ্যমে সরকার চলছে বিহারে।
বিহারের আগে মহারাষ্ট্রেও ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায় বিজেপি। শিব সেনার ভিতরের ভাঙনের লাভ পায় তারা। একনাথ শিন্ডে শিবিরকে সমর্থন করে মহারাষ্ট্রের সরকারে থাকার সুযোগ পায় ভারতীয় জনতা পার্টি। দু’সপ্তাহ ধরে চলা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। একইসঙ্গে ভেঙে যায় মহা বিকাশ আঘাড়ি চালিত সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে উদ্ধব বিজেপি-র নেতৃত্বে জোটের অধীনে নির্বাচনে জিতেছিলেন। তারপর কংগ্রেস ও এনসিপি-র সাহায্যে সরকার গঠন করেন। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর পর বিজেপি ফের রাজনীতির মোড় ঘোরানোর সুযোগ পায়। বিহার ও মহারাষ্ট্রের মতোই হিমাচল প্রদেশেও সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। চলতি বছরের নভেম্বরে সেখানে বিধানসভা নির্বাচন হয়।
ডিসেম্বরের ৮ তারিখ ফলাফল ঘোষণা হয়। পাঁচ বছর পর সেখানে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। হিমাচলের রাজনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হল, প্রতি ৫ বছর অন্তর সেখানে সরকার বদলায়। নির্বাচনের আগে কিছু বিজেপি নেতা দাবি করছিলেন, এ বছর সেই পরম্পরায় বদল ঘটবে। কিন্তু তাঁদের আশায় জল ঢেলে দেয় কংগ্রেস। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, ৬৮ আসনের মধ্যে ৪০টি পেয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি পেয়েছে ২৫টি আসন।
বিজেপি বেশ কয়েকটি রাজ্যে চূড়ান্ত সফল হয়েছে। মণিপুরে ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিধানসভা নির্বাচন হয়। সেখানে ৬০টি আসনের মধ্যে ৩২টি আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি। ২০১৭ সালে সেখানে মাত্র ২১ জন বিধায়ক ছিল তাদের। একইভাবে গোয়াতেও প্রায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গড়ে বিজেপি।
উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসে তারা। যদিও বাইশের নির্বাচনে দুই রাজ্যেই তাদের আসন সংখ্যা খানিকটা কমেছে। কিন্তু তাতে ক্ষমতায় আসতে কোনও সমস্যা হয়নি বিজেপি-র। হিমাচলের সঙ্গেই গুজরাটেও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে ডিসেম্বরে। সেখানে বিজেপি তাদের সর্বকালের সেরা ফলাফল করেছে।
বিগত ২৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও এ বার সেখানে রেকর্ড জয় পেয়েছে বিজেপি। ১৮২টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ১৫৬টি আসন। কিছু রাজ্যে খারাপ ফল হলেও গুজরাটের রেকর্ড জয় দলের কর্মী সমর্থকদের আরও কিছুটা চাঙ্গা করেছে। এই মুহূর্তে অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কেরল, ওড়িশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলগুলি ক্ষমতায় রয়েছে। রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। একইসঙ্গে ১৭টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি বা তাদের জোট সরকার।
এই রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে আরুণাচল প্রদেশ, অসম, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পুদুচেরি, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড। জম্মু ও কাশ্মীরে এখনও বিধানসভা নির্বাচন হয়নি। সেটি এখনও উপরাজ্যপালের অধীনস্থ একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল।