বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে যখন প্রতিদিন আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে করোনা ভাইরাস। দেশ তথা রাজ্যজুড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন কাতারে কাতারে মানুষ। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মৃত্যু মিছিল। তখনই অন্যদিকে সেই ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়ে উদ্ভব হলো নতুন এক রোগের। সাধারণ ভাষায় যাকে বলা যায় কৃষ্ণ ছত্রাকের সংক্রমন। বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম মিউকর মাইকোসিস। এরই মধ্যে এর ভয়ানক সংক্রমণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে গাইডলাইন জারি করেছে আইসিএমআর। কোভিডের থেকেও এই ছত্রাকের আক্রমণে মৃত্যুর হার বহুগুণ বেশি।
শুধু তাই নয় করোনায় যেখানে সংক্রমণের পর মানুষ মারা যান এক বা দুই শতাংশ, এই ছত্রাকের ক্ষেত্রে তা প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, করোনার সঙ্গে লড়াই করতে করতে এমনিতেই কাহিল হয়ে পড়ে শরীর। প্রায় ঝাঁঝরা হয়ে যায় ফুসফুস। ঠিক সেই সময়ই আপনার শরীরে হানা দিতে পারে মিউকর মাইকোসিস। শুরুতে ধরা পড়লে রোগ যে সাড়ে না এমন নয়। তবে সামান্যতম অবহেলা করলেই হতে পারে বড়োসড়ো বিপদ। শুধু মৃত্যুই নয় আশঙ্কা রয়েছে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ারও। মহারাষ্ট্রের ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটেছে আট জন রোগীর। গুজরাটের সুরাটে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন সাতজন।
এই বিপদজনক পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিবারই অ্যাডভাইজারি জারি করেছে আইসিএমআর।
আসুন দেখে নেওয়া যাক কাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবথেকে বেশিঃ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডায়াবেটিস মেলিটাসের প্রবল সমস্যায় ভোগা মানুষ, চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয়েছে এমন ব্যক্তি, অনেকদিন ধরে আইসিসিইউতে ভর্তি রোগী, সদ্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে অথবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন অথবা ভরিকোনাজল থেরাপিতে রয়েছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল। তবে বিপদ তৈরি হতে পারে সদ্য করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও। শরীরের স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে ইমিউনিটি। আর সেই সূত্র ধরেই শরীরে বাসা বাঁধে এই রোগ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক রোগের লক্ষণ গুলিঃ
করোনার মতোই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেই শরীরে প্রবেশ করে কৃষ্ণ ছত্রাক। চিকিৎসকরা বলছেন, চোখ বা নাকের আশপাশে লাল হয়ে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, নাক বন্ধ, নাক থেকে বেরোনো তরলের রং কালো বা লাল হয়ে যাওয়া, জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, রক্ত বমি, মুখের একদিকে প্রবল ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথা, দাঁত উঠে আসার মত সমস্যা, ক্রমশ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, ডাবল ভিশনের সমস্যা বা মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়া এ ধরনের উপসর্গ দেখলেই পরীক্ষা করান। কারণ অবহেলা করলে দিতে হতে পারে সময়ের মূল্য।
কিভাবে রুখবেন এই ছত্রাকের আক্রমণঃ
চিকিৎসকরা বলছেন, মারাত্মক সংক্রামক হলেও সচেতন থাকলে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। যেকোনো ধুলোময় স্থানে গেলে অবশ্যই ব্যবহার করুন মাস্ক। মাটি বা বর্জ্য নিয়ে কাজের সময় ব্যবহার করুন দ্রুত লম্বা ট্রাউজার এবং গ্লাভস।হাইপারগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা, করোনা মুক্তির পর সর্বদা নজর রাখুন শরীরের শর্করার পরিমাণের উপর। অক্সিজেন কনসেনট্রেটরে সব সময় ডিসটিল্ড ওয়াটার ব্যবহার করুন।
করোণা মুক্তির পর অনেকেই কাহিল হয়ে পড়েছেন কৃষ্ণ ছত্রাকের আক্রমণে। তাই আইসিএমআরের পরামর্শ উপসর্গ দেখলে এড়িয়ে যাবেন না। সাথে সাথে পরীক্ষা করান। সময় মতো ব্যবস্থা নিলে, তেমন মারাত্মক হয়ে উঠতে পারবেনা এই রোগ। তবে অবহেলা করলে কৃষ্ণ ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে উঠতে পারে রীতিমত ভয়ঙ্কর।