বাংলাহান্ট ডেস্কঃ লাদাখে (Ladakh) সামরিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানে চিনা (china) দূতাবাসের মুখপাত্রের টুইট আলোড়ন ফেলল সোশ্যাল মিডিয়ায়। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সঙ্গে ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদের যোগ রয়েছে বলে জানালেন পাকিস্তানে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ওয়াং জিয়ানফেং।
টুইটে আধিকারিক বলেন কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের একতরফা পদক্ষেপগুলি চিন এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে এবং ভারত-পাকিস্তান ও চিন-ভারত সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।’
Chinese diplomat’s tweet on Ladakh standoff ruffles feathers in India https://t.co/ejx70gqDmk
— The Express Tribune (@etribune) June 12, 2020
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগসূত্র বজায় রাখার দায়িত্ব করেন জিয়ানফেং। যিনি টুইটারে নিজেকে ইসলামাবাদে চিনা দূতাবাসের প্রেস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যে টুইট করছেন, তা যদিও বা নিজের মত হয়, তা সত্ত্বেও এই প্রথম কোনও চিনা আধিকারিক নয়াদিল্লি-বেজিংয়ের সীমান্ত দ্বন্দ্বের সঙ্গে কাশ্মীরের যোগসূত্র টানলেন।
সেই টুইটের সঙ্গে ‘চিন ইনস্টিটিউটস অফ কনটেম্পরাপি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস’-এর বিশেষজ্ঞ ওয়াং শিদার একটি নিবন্ধও জুড়েছেন জিয়ানফেং। সেই লেখায় ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদের সঙ্গে কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তনের যোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সেই নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানোর ক্ষেত্রে’ গত বছর অগস্ট থেকে ‘লাগাতার একতরফা পদক্ষেপ’ করছে ভারত। একইসঙ্গে চিনের সুরক্ষা মন্ত্রক বা প্রধান গোয়েন্দা এজেন্সির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রভাবশালী সংস্থার ওই বিশেষজ্ঞের সেই নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন করা নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তে ‘আঞ্চলিক শান্তির ক্ষেত্রে বড়সড় সংকট তৈরি হয়েছে’।
@WangXianfeng tweet is the same what #Pakistan media is playing, just to justify #China's act. He is just playing to the Pakistan media gallery .@Rezhasan .#Pakistan @ForeignOfficePk unofficial statement to media has the same points.https://t.co/C3UcJn19H8
— South Asia Pundit (@PunditAsia) June 12, 2020
গত বছর ৫ অগস্ট যখন জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করা হয়েছিল, তখন নয়াদিল্লির সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে দুটি বিবৃতি জারি করেছিল বেজিং। পূর্বতন রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘ভারত-চিন সীমান্তের পশ্চিম দিকের চিনা ভূখণ্ডকে ভারতের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির বরাবর বিরোধিতা করেছে চিন।’ লাদাখ নিয়ে বেজিংয়ের তরফে সেই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছিল।
শিদার প্রবন্ধেও লাদাখ প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘চিনের দিকে মানচিত্রে ভারত নয়া ভূখণ্ডের প্রসার ঘটিয়েছে। জিনজিয়াং এবং তিব্বতের স্থানীয় (প্রশাসনের) আওতার জায়গাকে লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানানো হয়েছে এবং তথাকথিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরকে রেখেছে।’ আর সেজন্যই পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চিন অশান্তি পাকাচ্ছে বলে নিবন্ধে স্বীকার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘এটা চিনকে কাশ্মীর বিতর্কে জড়িয়েছে এবং কাশ্মীর ইস্যুতে চিন এবং পাকিস্তানকে পালটা পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেছে, নাটকীয়ভাবে চিন এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়ানো হয়েছে।’
নিবন্ধে শিদা দাবি করেছেন, গত বছর ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর যখন বেজিং সফরে গিয়েছিলেন, তখন এই বিষয়গুলিতে চিনের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন সেদেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইউ। তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতের পদক্ষেপ চিনের সার্বভৌমত্বের অধিকার এবং স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং দু’দেশের সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চুক্তিকে লঙ্ঘন করেছে।’ যদিও সেই সময় জয়শংকর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, নয়াদিল্লি যা পদক্ষেপ করেছে তা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তাতে ভারতের বাইরের সীমান্তের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।
তারইমধ্যে চিনা আধিকারিকের টুইটের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের (র) প্রাক্তন বিশেষ সচিব অমিতাভ মাথুর। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে চিন আমাদের উপর চাপ তৈরি করছে এবং অনেকে যতটা তুলে ধরছেন, পরিস্থিতি ততটা সহজ নয়।