এক পায়েই বাজিমাত! ট্রেন দুর্ঘটনা কাড়তে পারে নি মনের জোর, জীবনযুদ্ধে জয়ী এই কাগজ বিক্রেতা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : অফিস টাইমের বর্ধমান স্টেশন (Burdwan Station) লোকেলোকারণ্য। চারদিকে থিকথিক করছে নিত্য-যাত্রীদের ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে সিঁড়ি দিয়ে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসলে দেখা মেলে একটি ডাস্টবিনের। সেই  ডাস্টবিনের পাশে বসেই কাগজ বিক্রি করে চলেছেন এক প্রৌঢ়। বছর ৫৪-র পাঁচু গোপাল চক্রবর্তীর গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসার জায়গা বর্ধমান স্টেশনের (Burdwan Station) এই ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম।

বর্ধমান স্টেশনের (Burdwan Station) এক কাগজ বিক্রেতার গল্প

স্টেশনের ডাস্টবিনের পাশে বসে থাকা এই কাগজ বিক্রেতা লড়েছেন জীবনযুদ্ধের এক অসম লড়াই। অভাবের সংসারে পাঁচু গোপাল পড়াশোনা করতে পেরেছেন ক্লাস থ্রি পর্যন্ত। বাড়ির একমাত্র ছেলে হওয়ায় ছোট্ট বয়স থেকেই ট্রেনে বিক্রি করতে শুরু করেন ঝাল মুড়ি। ১৪ বছর বয়সে পাঞ্জাব মেলে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় (Accident) একটা পা কাটা পড়ে পাঁচু গোপালের। 

Burdwan Station

বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছেলের এহেন অবস্থায় সংসারে নেমে এসেছিল চরম অনিশ্চয়তা। তবে জীবন যুদ্ধের অসম লড়াইয়ে হেরে না গিয়ে ক্রাচকে সঙ্গী করে ১৪ বছরের পাঁচু গোপাল শুরু করেন এক নতুন যুদ্ধ। গত ২৬ বছর ধরে পাঁচু গোপাল বিক্রি করে আসছেন সংবাদপত্র। একটা পা না থাকা সত্বেও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবন যুদ্ধের এক বিরল লড়াই লড়ছেন ৫৪ বছর বয়সে এসেও।

আরোও পড়ুন : “চাপে পড়ে” বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন রোহিত? ২,১৭২ দিন পর ফের পুরনো ভূমিকায় “হিটম্যান”

কবে থেকে খবরের কাগজ (News Paper) বিক্রিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তা আর মনে নেই পাঁচু গোপালের। তাঁর কথায়, ‘বয়স মনে নেই। তখন খবরের কাগজের দাম ছিল ৭০ পয়সা। যুগান্তর, স্টেটসম্যান, সত্যযুগ, অমৃতবাজার এগুলো বেচতাম। বরুণবাবু তখন অমৃতবাজারের প্রেসে কাজ করছেন।’ দিন আনা দিন খাওয়া পাঁচু গোপালের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ও এক ছেলে।

আরোও পড়ুন : ‘এই পুলিশের ট্রেনিং দরকার’, ক্ষুব্ধ জাস্টিস ঘোষ, এবার বড় নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

একমাত্র ছেলে কাজ করছেন মেমারির একটি লজে। স্ত্রী গৃহবধূ। প্রতিদিন ভোরবেলা উঠতে হয় পাঁচু গোপালকে। বাইরে এক জায়গা থেকে কাগজ কিনে এনে বসে পড়েন বর্ধমান স্টেশনের (Burdwan Station) ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ডাস্টবিনের পাশে। কোনোদিন ১৫০ টাকা তো কোনোদিন ২০০ টাকা রোগজার হয় কাগজ বিক্রি করে।

FB IMG 1733398510896

আক্ষেপের সুরে পাঁচু গোপালের অভিযোগ, সংবাদপত্রের দাম ক্রমাগত বাড়লেও অবস্থা পরিবর্তন হয়নি বিক্রেতাদের। বর্ধমান স্টেশনে খুবই পরিচিত পাঁচু গোপাল। সদা হাস্যজ্জ্বল মুখের পাঁচু গোপালকে সবাই চেনে এক ডাকেই। জীবন যুদ্ধের অসম লড়াইয়েও যে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা যায় তারই অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন পাঁচু গোপাল চক্রবর্তী।

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর