বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের (CBI) হাতে গ্রেফতার হন তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত গ্রেফতারির পর থেকেই রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতৃত্ব এ প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা সভাপতির পাশে দাঁড়ালেও বর্তমানে এ মামলায় অনুব্রতর বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে উঠে এসেছে। কয়েকদিন পূর্বে অনুব্রত ও তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে ১৭ কোটি টাকার সন্ধান পায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আর এবার অনুব্রতর বিরুদ্ধে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অরূপ ভট্টাচার্য বিস্ফোরক দাবি করে বসলেন। গরু পাচার মামলায় একসময় সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকা ওই ব্যবসায়ী জানান, “একটা টেন্ডার পাওয়ার জন্য ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা নগদ দিতে হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে।
এদিন অরূপবাবু জানান, “২০১৭ সালে জেলাশাসক দ্বারা তিলপাড়া ড্যাম সংস্কারের প্রস্তাব আসলে টেন্ডার হওয়ার জন্য আমি অনেক রকম চেষ্টা করি। এ প্রসঙ্গে সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরেই আমি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে যাই। ওই সময় সবকিছুই করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার পরিবর্তে আমার কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল।” সেই মুহূর্তে অতটা টাকা দিতে না পারলেও মোট ৬ কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ তিনি প্রদান করেছিলেন বলেই দাবি অরূপ ভট্টাচার্যের। সিউড়ির ব্যবসায়ীর কথা অনুযায়ী, শুধু অনুব্রত মণ্ডল নন, সেই টাকার বিশাল পরিমাণ গেয়েছিল তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের হাতেও।
উল্লেখ্য, এদিন সকাল হতেই বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের একটি রাইস মিলে তল্লাশি চালায় সিবিআই। প্রথমে ঢুকতে বাধা পেলেও পরবর্তীতে প্রবেশ করতেই চক্ষু চড়ক কাজ হয়ে যায় তাদের। রাইস মিলের ভেতর সারে সারে এসইউভি গাড়ি পার্কিং দেখে হতবাক হয়ে যান সকলে। এই প্রসঙ্গে এদিন অরূপ ভট্টাচার্য জানান, “রাইস মিলের ভেতরে থাকা অসংখ্য গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি আমিই কিনে দিয়েছিলাম, যার দাম পড়েছিল ৪৬ লক্ষ টাকা।”
একইসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে গোটা বাংলায় পাথর এবং বালির গাড়ি থেকে যেভাবে তোলা আদায় করা হয়ে চলেছে, তাতে অনেকে ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা শেষ, আমাদের আর ব্যবসা করার কোনো রকম ক্ষমতাই নেই।”
প্রসঙ্গত, অরূপ চক্রবর্তীর দাবি অনুযায়ী, যে গাড়িটি তিনি ক্রয় করেছিলেন, সেটি তাঁর ব্যবসার অন্যতম শরিক প্রবীর মণ্ডলের নামে ক্রয় করা হয়েছিল। সেই প্রবীর মণ্ডল এদিন অনুব্রতর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, “একটা সময় আমি গাড়ি ফেরত চাইলেও উল্টে অনুব্রত মণ্ডল আমাকে হুঁশিয়ারি দেন। উনি বলেন, আগে ঠিক কর, গাড়ি নিবি নাকি গাজার কেস? তাই ভয়ে কিছু বলতেও পারিনি।” সব মিলিয়ে গরু পাচার মামলায় উঠে আসা একের পর এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্যে অনুব্রত মণ্ডলের অস্বস্তি যে ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তা বলাবাহুল্য।