বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এসএসসি (SSC) সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় ইডির (ED) হাতে গ্রেফতার প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। এই মামলায় পার্থর বিরুদ্ধে বর্তমানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসে চলেছে। সেই সূত্র ধরেই সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম মারফত জানা যায় যে, পার্থ গনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর উদ্দেশ্যে ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) একটি হোটেলে হানা দেয় আয়কর দফতরের অফিসাররা। এক্ষেত্রে ওই ব্যবসায়ী টাকা পাচারের জন্য ঝাড়খণ্ডে পৌঁছে গিয়েছেন বলে খবর সামনে আসে। তবে বর্তমানে সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেন পার্থ ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি।
কৌস্তুভ রায় নামে পার্থ ঘনিষ্ঠ ওই ব্যবসায়ী জানান, “বেড়ানোর জন্যই আমি হাজারীবাগ গিয়েছিলাম। তবে টাকা পাচারের যে অভিযোগটি সামনে আনা হয়েছে, তা মিথ্যা।” এদিন পিটিআইয়ের খবরকে এক প্রকার মিথ্যে বলে দাবি করেন কৌস্তভ। উল্লেখ্য, সম্প্রতি পিটিআই সূত্র মারফত জানা যায় যে, পার্থ ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী ঝাড়খণ্ডের হাজারীবাগের একটি হোটেলে টাকা পাচার করার উদ্দেশ্যে ওঠেন। পরবর্তীতে ইডির থেকে সূত্র পেয়ে আয়কর দফতরের আধিকারিকরা সেখানে হানা দেয়। তবে সেই মুহূর্তে হোটেলটি থেকে আবার পলায়নও করেন ওই ব্যক্তি। এক্ষেত্রে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটির কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে বলেই দাবি করা হয়।
গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে আয়কর দফতরের এক কর্তা জানান, “গত বৃহস্পতিবার রাতে বহুক্ষণ ধরে হোটেলে তল্লাশি চালানো হলেও সন্দেহভাজন ব্যক্তিটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। এক হোটেল কর্মী জানিয়েছেন যে, ওই ব্যক্তি সরকারি গাড়ি করে এসেছিলেন এবং তার সঙ্গে একটি ব্যাগও ছিল।” তবে এদিন অবশেষে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন কৌস্তভ। তিনি জানান, “আমি যে হোটেলে উঠেছিলাম, সেটা সঠিক। কিন্তু আমার সঙ্গে কোন রকম টাকা কিংবা ব্যাগ ছিল না। সরকারি গাড়ি করেও রওনা দিইনি।”
এরপরেই সিবিআই এবং ইডির তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত চারদিন ধরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আমার বাড়ি এবং অফিস ছাড়াও অন্যান্য কর্মীদের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে আয়কর বিভাগ নাকি ইডি কিংবা সিবিআই এই তল্লাশি চালাচ্ছে, তা বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি।” একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “আমার সংস্থায় একাধিক সাংবাদিক কাজ করেন। তাদেরকে হেনস্থা করার পাশাপাশি খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৮ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একপ্রকার হেনস্থার শিকার হয়ে চলেছি। ইডি এবং সিবিআইয়ের কাজ শেষ হতেই আয়কর বিভাগের কাজের মাধ্যমে যেন বৃত্ত সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে কৌস্তভ রায়ের। এক্ষেত্রে সিবিআই তলব মাঝে নিজাম প্যালেসে পৌঁছে যাওয়ার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা যায় তাঁকে। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করার দৃশ্য ধরা পড়ে। এই প্রসঙ্গে বিরোধীরা কৌস্তভকে মুখ্যমন্ত্রীর ‘দূত’ বলেও কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তবে এ প্রসঙ্গে কৌস্তভ বলেন, “পার্থদার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমি সংবাদমাধ্যমের প্রধান। সেই সূত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। আমি বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যেমন রয়েছি, ঠিক তেমন ভাবে অন্যান্য রাজ্যর বিরোধী দলগুলি সঙ্গেও আছি।” এক্ষেত্রে অতীতেও তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক স্থানে দেখা যায় কৌস্তভকে। তবে এক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে টাকা পাচারের যে গুরুতর অভিযোগ উঠে চলেছে, এদিন তার বিরুদ্ধে একপ্রকার মুখ খুললেন তিনি। কৌস্তভের সাফ জবাব, “সিবিআই এবং ইডির তরফ থেকে আমাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডে গেলেও আমার সঙ্গে টাকা পাচারের কোনো রকম সম্পর্ক নেই।”