বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সন্তানের বড় হয়ে ওঠার জন্য পিতৃ পরিচয় বাধ্যতামূলক নয়। ২০২৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ঐতিহাসিক রায়ের পর উঠে যায় পিতৃ পরিচয়ের বাধ্যবাধকতা। স্বীকৃতি পায় ‘সিঙ্গল মাদারহুড’। আদালতের রায়ে স্পষ্ট জানানো হয় সন্তানের পরিচিতির ক্ষেত্রে বাবার নাম আবশ্যিক নয়,মায়ের পরিচয়ই যথেষ্ট। কিন্তু বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তান কি শুধুমাত্র মায়ের পরিচয় বহন করতে পারে? নতুন করে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

বড় নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)

সম্প্রতি একটি মামলার সূত্রে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর সন্তান চাইলে শুধু মায়ের পরিচয় বহন করতে পারেন। শুধু তাই নয়, মা যদি তফসিলি,জাতি উপজাতি অথবা ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত হন সেক্ষেত্রে সন্তানও সেই জাতিভুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। এক্ষেত্রে জন্মদাতা পিতা সাধারণ শ্রেণীভুক্ত (জেনারেল কাস্ট) হলেও, সন্তানকে মায়ের জাতিভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত করা যায় না।

২০০৩ সালে হাওড়ার বাসিন্দা সীমা পাত্র (নাম পরিবর্তিত) নামে এক মহিলার সাথে বিয়ে হয়েছিল সৌমেন মিত্র (নাম পরিবর্তিত) নামে এক ব্যক্তির।  বিয়ের ২ বছরের মাথায় ২০০৫ সালে পুত্র সন্তানের জন্ম হয় সীমা দেবী। তারপর সবকিছু ঠিকঠাক চললেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে।  তাদের মধ্যে তৈরি হয় দূরত্ব। শেষ পরিণতি ডিভোর্স।

বিবাহবিচ্ছিন্না সীমা দেবী তার ছেলেকে নিয়ে আমতায় বাপের বাড়ি থাকতে শুরু করেন। তিনি জানান জন্মসূত্রে তিনি ‘তিয়ার’ সম্প্রদায়ভুক্ত। সেই সংক্রান্ত সার্টিফিকেটও তার কাছে আছে। ছেলেকে নিজের পরিচয়ে বড় করে তুলতে চান তিনি। তাই ছেলেকে তফশিলি জাতিভুক্ত হিসেবে পরিচয় দিতে ২০২২ সালের মে মাসে তিনি মহকুমা শাসকের কাছে একটি আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনের কোন উত্তর আসেনি। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি জানতে পারেন তার আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:  প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার? যা বললেন সুকান্ত…

কারণ হিসেবে জানানো হয়, আবেদনকারী মা তফসিলি জাতিভুক্ত হলেও জাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পিতৃ পরিচয়ই নির্ণায়ক। তাই এক্ষেত্রে সন্তানের পিতা যেহেতু জন্মসূত্র জেনারেল কাস্ট তাই আবেদনকারী ছেলেকে তফসিলি জাতিভুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না।

calcutta high court 3

এরপর কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সীমা দেবী জান সরাসরি হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন। ততদিনে তার ছেলেও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়। তখন প্রশ্ন ওই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। কিন্তু আবেদনের গুরুত্ব খতিয়ে দেখে বিচারপতি সিনহা নির্দেশ দেন এভাবে বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলার সন্তান চাইলে শুধুমাত্র মায়ের পরিচয়ই গ্রহণ করতে পারেন। এমনকি সন্তান কোন জাতিভুক্ত হবে তা ঠিক করার ক্ষেত্রে পিতৃ পরিচয় নির্ণায়ক নয়। এক্ষেত্রে সন্তান যেহেতু সাবালক হয়ে গিয়েছেন তাই মায়ের জাতিভুক্ত হওয়ার জন্য তাকেই আবেদন করতে হবে। আবেদন যথাযোগ্য হলে আবেদনকারীকে মায়ের জাতিভুক্ত হওয়ার স্বীকৃতি দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।