বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পদ হারিয়ে বিপাকে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের (Vineet Goyal)। আর জি কর (RG Kar) হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিচয় প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন কলকাতা পুলিশের কমিশনের বিনীত গোয়েল। সেই নিয়ে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে (Calcutta High Court) দায়ের হয়েছিল মামলা। বিনীতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আর্জিতে জনস্বার্থ মামলা চলছে কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার সেই জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ দফতরকে যোগ করতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট।
পাশাপাশি হাই কোর্টের বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েকের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ওই দফতরকে আদালতে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, এই ক্ষেত্রে একজন আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে কী আইনি পদক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে। কেন্দ্রের কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতরটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে রয়েছে। আইপিএস বিনীত গোয়েল কেন্দ্রীয় ক্যাডারের আধিকারিক হওয়ায় তার মামলায় কেন্দ্রের কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতরকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলাটি করেছিলেন আইনজীবী অমৃতা পাণ্ডে। তিনি জানিয়েছেন কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতরের অধীনে থাকা কোনও ব্যক্তি আইনভঙ্গ করলে, তার বিরুদ্ধে কী কি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যার জন্যই হলফনামা তলব করেছে হাইকোর্ট। পুজোর ছুটির পর দ্বিতীয় সপ্তাহে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হতে পারে।
গত ৯ অগাস্ট আরজি কর কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার দিন সংবাদমাধ্যমের সামনে একাধিকবার নির্যাতিতা চিকিৎসকের নাম বলে ফেলেন কলকাতার তৎকালীন সিপি বিনীত গোয়েল। এই ঘটনায় বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় মামলা। কিন্তু যেহেতু আর জি কর মামলা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন তাই বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে চায়নি কলকাতা হাইকোর্ট। তবে শেষ সুপ্রিম শুনানিতে ফের এই বিষয়টি উত্থাপিত হলে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় রাজ্যকেই এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন মামলাকারীর আইনজীবী।
এর আগে গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম রাজ্যের আইনজীবীকে নোটিস দেওয়ার নির্দেশ দেন। আইনজীবী মহেশ জেটমালানি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বিনীত গোয়েলের মামলার দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানান। আইনজীবী আরও বলেছিলেন, উচ্চ আদালতে এই মামলার শুনানির পথে কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সিপি থাকাকালীন আরজি করের নির্যাতিতার নাম বহুবার প্রকাশ্যে আনেন বিনীত গোয়েল। এই আইনবিরুদ্ধ কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার জন্য নির্দেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল। এর আগে হাইকোর্টে মামলা উঠলে আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “যাকে সিপি পদ থেকে অপসারণের দাবিতে মামলা হয়েছিল, সেই বিনীত গোয়েলের তো পদোন্নতি হয়ে গেল! সিপি থেকে এখন তো উনি এডিজি পদে চলে গেছেন!”
আরও পড়ুন: পুজোর মধ্যেই বড় খবর! সরকারি চাকরি নিয়ে বিরাট সিদ্ধান্ত! জারি নয়া নির্দেশিকা
যদিও পালটা বিনীতের আইনজীবী বলেছিলেন, ‘ইতিমধ্যে সিপিকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাই এখন এই আবেদনের আর কোনও গুরুত্ব নেই।”
দু’পক্ষের বক্তব্যের শুনে সেই সময় শুনানিতে কোনও মন্তব্য করেননি প্রধান বিচারপতি। যেহেতু আরজি কর সংক্রান্ত সমস্ত মামলা বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন তাই জুডিশিয়াল প্রটোকল মেনে হাইকোর্টে মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সংকেত মেলার পর হাইকোর্টে এই মামলা চলায় আলাদা করে কোনও আইনি বাধা নেই বলে আদালতে জানিয়েছিলেন মামলাকারীর আইনজীবী। এরপরই নির্ধারিত দিনে এই মামলা শুনানির জন্য উঠেছিল কলকাতা হাইকোর্টে।