বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে (Matua Thakurbari) অশান্তির ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ডিজিকে সিট (SIT) গঠনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। মঙ্গলবার বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে এই মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই সিট গঠনের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি। সিটের নেতৃত্বে থাকবেন ADG পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক। আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে সিটকে এই নিয়ে আদালতে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
শুধু তাই নয়, অশান্তির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সমস্ত মতুয়া ভক্তকে জামিন দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। তবে তদন্তে সাহায্যের জন্য তারা তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে সপ্তাহে দুদিন দু’ঘণ্টার জন্য দেখা করবেন বলেও জানানো হয়। পাশাপাশি তারা জেলা ছাড়তে পারবেন না বলেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অন্যদকে মন্দির ও চাঁদপাড়া হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ঠাকুরবাড়ির অশান্তির ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। অশান্তি রুখতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলা হয়। পাশাপাশি একজোটে মতুয়া ভক্তদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধেও সরব হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেই মামলার শুনানিতেই এদিন সিট গঠনের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।
প্রেক্ষাপট : গত রবিবার নবজোয়ার কর্মসূচি নিয়ে ঠাকুরনগরে মতুয়াধামে পুজো দিতে আসার কথা ছিল অভিষেকের। সকাল থেকেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব মন্দির চত্বর সাজিয়ে ফেলে। তবে দুপুর হতেই বদলে যায় চিত্র। হঠাৎই মতুয়া সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। ভেঙে ফেলা হয় অভিষেকের জন্য তৈরি করা তোরণও। এলাকার বিজেপির সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের মদতেই এই ঘটনা ঘটানো হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
পরে বিকেলে ঠাকুরনগর পৌঁছন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কর্তৃপক্ষ মূল মন্দিরের ফটক বন্ধ করে দেওয়ায় ঢুকতে না পেরে পাশের মন্দিরে গিয়ে পুজো সারেন অভিষেক। সব সেরে বাইরে এসে শান্তনু ঠাকুরকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘মতুয়াধাম কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমি তিন মাস পর আবার এখানে আসব। পারলে আটকান দেখান।’
এরপর অভিষেক এলাকা ছাড়তেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল-বিজেপি সমর্থকেরা। অভিষেক ঠাকুরনগর ছাড়ার পরই তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। অন্যদিকে তৃণমূলের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ঘটনায় দুই পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন।
এরপর সেই ঝামেলা গড়ায় হাসপাতাল পর্যন্ত। তৃণমূল ও বিজেপি, নিজেদের কর্মীদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও মারামারি শুরু হয়। শান্তনু ঠাকুরের অনুগামীদের আক্রমণ করে তৃণমূলকর্মীরা, এমনটাই অভিযোগ করা হয়। ঘটনাস্থলেই দু’পক্ষের ধস্তাধস্তির দরুন বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া আহত হয়েছেন। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যেও চলে ঝামেলা, হাতাহাতি। এরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছোন শান্তনু ঠাকুর। তৃণমূলের ওপর অভিযোগ তুলে সরব হন তিনি। এই নিয়েই গতকাল অভিষেক ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।