বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শারীরিক অসুস্থতার কারণে বদলির আবেদন জানিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষিকা (School Teacher)। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সেই বদলির আবেদন আটকে রেখেছিল স্কুল পরিচালন কমিটি। ইতিমধ্যেই সেই জল গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) অবধি। এবার তার প্রেক্ষিতেই কড়া নির্দেশ দিয়ে দিল উচ্চ আদালত।
কী নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)?
দক্ষিণ ২৪ পরগণার সাগরের সুমতিনগর শরৎকুমার হাইস্কুলের শিক্ষিকা মানসী সর্দার শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০২১ সালে বদলির (Transfer) আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি প্রায় তিন বছর সেই আবেদন ফেলে রেখেছিল। ২০২৪ সালে স্কুল কমিটির বৈঠকে প্রথমবার সেই আবেদন নিয়ে আলোচনা করা হয়। কমিটি জানায়, বদলির আর্জির সঙ্গে শারীরিক অসুস্থতার কোনও নথিপত্র জমা দেননি।
এই বিষয়ে ওই শিক্ষিকার আইনজীবী উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ২০১৫ সালে এই বিষয়ক সরকারি নিয়ম এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিধি অনুসারে, স্কুল কমিটির শিক্ষিকার কাছ থেকে এই ধরণের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট চাওয়ার অধিকারই নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শারীরিক অসুস্থতাজনিত বদলির আবেদন পরিচালন কমিটি চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করাতে পারে। এমনকি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকেরও (ডিআই- মাধ্যমিক) ভেরিফিকেশন সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ডকুমেন্টস চাওয়ার সুযোগই নেই’।
আরও পড়ুনঃ সরকারি কর্মীদের পোয়া বারো! ৪% DA বাড়িয়েছে রাজ্য! কবে থেকে অ্যাকাউন্টে ঢুকবে?
এবার শিক্ষিকার বদলির আবেদন আটকে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটিকে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা করল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। ওই জরিমানার টাকা বদলির আবেদনকারী শিক্ষিকাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চ।
হাইকোর্ট জানিয়েছে, কোনও শিক্ষক অথবা শিক্ষাকর্মী যদি অসুস্থতার কারণে বদলির আর্জি জানান, তাহলে আবেদনকারীর শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। সেই অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। উচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, বছরের পর বছর ধরে মানবিক আবেদন ফেলে রাখা ভীষণ অসংবেদনশীলতার পরিচয় এবং অমানবিক আচরণ। সেই কারণে ম্যানেজিং কমিটিকে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা করেছে বিচারপতি ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই জরিমানার টাকা কমিটির সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
হাইকোর্টের (Calcutta High Court) এই নির্দেশ প্রসঙ্গে অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গরাই বলেন, ‘এই রায় কেবলমাত্র ওই শিক্ষিকার ব্যক্তিগত জয় না। সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। প্রশাসনিক জটিলতা অথবা গাফিলতির কারণে কোনও শিক্ষকের ন্যায্য অধিকার খর্ব হতে পারে না। আদালত গাফিলতির জন্য পরিচালন কমিটিকে জরিমানা করে এটা নিশ্চিত করেছে, ভবিষ্যতে এই ধরণের অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে। বেশ কিছু ম্যানেজিং কমিটি ক্ষমতার অপব্যবহার করে, হাইকোর্টের এই রায়ে তারা হয়তো শুধরে যাবে’।