বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিজের স্ত্রীকে জোর করে অন্য পুরুষের সাথে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হতে বাধ্য করত স্বামী। পুলিশের কাছে এই অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন হাওড়ার এক গৃহবধূ। কিন্তু মহিলার সেই অভিযোগকে তেমন গুরুত্বই দেয়নি পুলিশ। তাই বাধ্য হয়েই এই অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্যাতিতা মহিলা।
হাওড়ার নির্যাতিতার মামলায় হাইকোর্টের (Calcutta High Court) ভর্ৎসনার মুখে পুলিশ
এমন গুরুতর অভিযোগ পেয়েও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। রাজ্য পুলিশের এহেন ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এই মামলাটি সোজা সাইবার ক্রাইম বিভাগে পাঠিয়ে দিয়ে সঠিক তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একইসাথে অভিযুক্ত ওই যুবকের ফোনের মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধার করেও উপযুক্ত তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, পেশায় দর্জি হলেও দিনে বেড়ে উঠেছিল ওই যুবকের বিষয়-সম্পত্তি। ঘুরপথে বিভিন্ন অসামাজিক কাজ কর্ম করেই নিজের প্রতিপত্তি বাড়াতে শুরু করেছিল ওই অভিযুক্ত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই মহিলার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী তাকে নানা ধরনের অসামাজিক, কুরুচিকর কাজ করতে বাধ্য করত। এমনকি তাঁর অজান্তেই নগ্ন ছবি তোলা থেকে শুরু করে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও রেকর্ড করে রাখতে ওই যুবক।
পাশাপাশি, চলত আরও নানান অকথ্য অত্যাচার। এখানেই শেষ নয় স্বামীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনার পাশাপাশি ওই মহিলা জানিয়েছেন তার স্বামীর বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াতও ছিল। স্ত্রীর একাধিক অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে বাংলাদেশের কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে পাঠাত ওই যুবক। আর এই ধরনের অসাধু কাজ করে নিয়মিত বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে আসত ওই গুণধর স্বামী।
আরও পড়ুন: উত্তরকে টেক্কা পশ্চিমের জেলার! সপ্তাহান্তে কত কমবে কলকাতার তাপমাত্রা?
আদালতে (Calcutta High Court) মহিলার আইনজীবী জানিয়েছেন, ওই যুবক নাকি নিজেই বাংলাদেশিদের বাড়িতে ডেকে আনত। আর তারপরেই নিজের স্ত্রীকে তাঁদের সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে বাধ্য করত। দিনের পর দিন এই নারকীয় অত্যাচার সহ্য করার পর অবশেষে বাধ্য হয়েই ওই মহিলা আইনের দ্বারস্থ হন।
যদিও পুলিশ প্রথমে তার অভিযোগ পেয়েও সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। তাই বিষয়টি বিবেচনা না করেই লঘু ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। যা শুনেই এদিন আদালতে বিরাট বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন জাস্টিস ঘোষ। পুলিশের কেস ডায়েরি এবং তদন্তের রিপোর্ট তলব করেছিলেন তিনি। এদিন সাঁকরাইল থানার পুলিশ তা আদালতে (Calcutta High Court) জমা দেয়।
এই মামলায় রাজ্যের আইনজীবী জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের কাছে মহিলার অভিযোগের কোনও প্রমাণ ছিল না। চিকিৎসার প্রয়োজনেই নাকি কয়েকজন বাংলাদেশিকে সাহায্য করেছিলেন ওই অভিযুক্ত যুবক। কিন্তু এদিন মহিলার আইনজীবী পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। কারণ নির্যাতিতা অভিযোগ করার এক মাস পর পুলিশ এই মামলায় পদক্ষেপ করে। যার ফলে অভিযুক্তের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হলেও ততদিনে সে মোবাইল থেকে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলে।
এদিন পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়ে জাস্টিস ঘোষ ওই বাজেয়াপ্ত মোবাইলটি রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির সাইবার অপরাধ বিভাগে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসাথে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, মোবাইল থেকে মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধার করে, তা সঠিক ভাবে যাচাই করতে হবে সাইবার অপরাধ বিভাগকে। সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পাশাপাশি এবার থেকে এই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব তিনি ওই বিভাগকেই দিয়েছেন।