বাংলা হান্ট ডেস্কঃ অমানবিক! খাস কলকাতায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে (State Owned Bank) কর্মরত বিশেষ ভাবে সক্ষম অফিসারের প্রতি কর্তৃপক্ষের বর্বর আচরণ। দুর্ঘটনার শিকার বলেই কী দিনের পর দিন অবিচার? এই নিয়েই ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। এদিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলা উঠলে তিনি গোটা পরিস্থিতির জন্য ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘ইগো’কেই দায়ী করেন। এরপরই কড়া নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
কী ঘটেছিল? বহুদিন ধরেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিযুক্ত অনির্বাণ পাল নামের এক কর্মী। পরবর্তীতে সেই ব্যাঙ্ক অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়। সব ঠিকঠাক চললেও ২০১৫-য় মারাত্মক পথ দুর্ঘটনার জেরে অনির্বাণের শরীরের ৭০ শতাংশ বিকল হয়ে যায়। পরে কাজে যোগ দিলেও নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির আবেদন জানাতে পারেননি ওই কর্মী।
অনির্বাণ জানান সেই সময়ের মধ্যে কম করে দু’জন অফিসার পদোন্নতি পেয়ে কলকাতাতেই কাজ করছেন। তাদের কোথাও বদলি করা হয়নি। অথচ ২০১৮ সালে অনির্বাণ পদোন্নতির আবেদন জানালে তাকে পদোন্নতি করা হয় ঠিকই তবে একই সঙ্গে পাটনায় বদলি করে দেওয়া হয়। শারীরিক অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও তার দিক ভেবে দেখেনি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
আদালতে মামলা উঠলে অনির্বাণের আইনজীবী জানান, ব্যাঙ্কের বিধি অনুযায়ী তার মক্কেলের মতো বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ক্ষেত্রে পদোন্নতি হলেও বদলি করা যায়না। তিনি আরও জানান অন্য রাজ্যে বদলি করে দেওয়ার পর অনির্বাণ কর্তৃপক্ষের কাছে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার জন্য বহুবার আবেদন করেন। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি ব্যাঙ্ক।
পরে বছরের শেষে অনির্বাণ প্রায় এক মাসের জন্য ছুটি কাটাতে গেলে তাকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ইমেল মারফত হুঁশিয়ারি দিতে থাকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অনির্বাণ তাকে নিচু পদে নামিয়ে কলকাতায় ফেরানোর জন্য কাতর আবেদন জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর কোনো উপায় না পেয়ে ‘কমিশনার ফর পারসনস অফ ডিজ়েবিলিটিজ’-এর কাছে আবেদন জানালে ব্যাঙ্ক তাকে নিচু পদে নামিয়ে কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়।
দু’বছর পর ২০২০-তে ফের পদোন্নতির আবেদন জানান। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই তাকে সহযোগিতা না করায় শেষমেষ ২০২৩-এর এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অনির্বাণ। এদিন বিচারপতি মান্থার এজলাসে মামলা উঠলে তার পর্যবেক্ষণ, ‘এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উর্দ্ধতন কর্তাদের একাংশের ইগো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করছে। বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন নিচুতলার কর্মী-অফিসাররাও।
আরও পড়ুন: ফের সবুজ ঝড়! হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে BJP-কে টেক্কা TMC-র, কটি আসনে এগিয়ে?
এক্ষেত্রে কেন্দ্রের অর্থসচিব, মানবসম্পদ উন্নয়ন সচিব এবং ভিজিল্যান্স কমিশনারকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরী করে তার ভিত্তিতে এই সকল অফিসারদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।