বাংলা হান্ট ডেস্ক: কোন উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কাউকে বাংলাদেশী বলে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সম্প্রতি একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এমনই এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। পাশাপাশি রাজ্যের উদ্দেশ্যে উচ্চ আদালতের প্রশ্ন, ‘সব পরিচয়পত্র থাকার পরেও আর কী নথি চাই?’
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশ
প্রসঙ্গত এদিন যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশি হওয়ার তকমা দেওয়া হয়েছে তিনি আসলে নদীয়ার রানাঘাটের হাঁসখালীর বাসিন্দা সুদীপ বিশ্বাস। ২০২০ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর দমকল বিভাগের ফায়ার অপারেটর পদে নিয়োগের পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বছর যাচাই প্রক্রিয়ায় আটকে যায় সুদীপের নাম। কারণ হিসাবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্থাৎ পিএসসি এবং রাজ্যের তরফে জানানো হয় সুদীপ নাকি বাংলাদেশি নাগরিক।
তাই তিনি নাকি এদেশে চাকরি পাওয়ার অধিকারী নন। যদিও ভারতের পাসপোর্ট,ভোটার কার্ড,আধার কার্ড সমস্ত তথ্য দিয়ে ওই চাকরিপ্রার্থী নিজেকে ভারতীয় বলেই দাবি করেছেন। সেই সাথে তিনি প্রশ্ন তোলেন সমস্ত উপযুক্ত প্রমাণ থাকার পরেও তাঁকে কেন বাংলাদেশী বলে অভিহিত করে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? তাই চাকরি আটকে দেওয়ার পর পিএসসির বিরুদ্ধে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)-এ মামলা দায়ের করেছিলেন সুদীপ।
সেখানে মামলা খারিজ হলেও হার মানেননি তিনি। তাই এরপর তিনি সোজা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন। আদালতে তার হয়ে মামলা লড়েন আইনজীবী শান্তনু মাঝি এবং আইনজীবী অনিন্দ্য বসু। এরপর শুক্রবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার নির্দেশে জানায়, ওই চাকরিপ্রার্থী চাকরি পাওয়ার যোগ্য। তাই এদিন হাইকোর্টের (Calcutta High Court) তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যেই মামলাকারী কে দমকলের ফায়ার অপারেটর পদে চাকরি দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘ওঁর সব অঙ্গই পুরুষের মতো’, প্যারিস অলিম্পিকের বিতর্কিত ‘পুরুষ’ বক্সারকে একহাত নিলেন কঙ্গনা
জানা যাচ্ছে, এই মামলার অভিযোগকারী সুদীপের পরিবার ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ভারতে এসেছিল। তাই তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী নাগরিকত্বের একাধিক দিক খতিয়ে দেখা হয়। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। কারণ ওই মামলাকারী যে আসলে বাংলাদেশী তার স্বপক্ষে রাজ্যের কাছে কোন উপযুক্ত প্রমাণ নেই।
তাই কোন প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কাউকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করে করে রাখা যাবে না। এছাড়াও সমস্ত তথ্যের যাচাই করে আদালত জানিয়েছে সুদীপ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক এমনকি স্নাতক পাস করেছেন ভারতেরই স্কুল কলেজ থেকে। তার পাসপোর্ট সহ অন্যান্য নথিও ভারতীয়। এমনকি তিনি নিজের নামে জমিও কিনেছেন এই দেশে। তাই ঠিক কোন চুক্তিতে তাকে বাংলাদেশী বলে বিবেচনা করা হচ্ছে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।