হাতে মাত্র ৩ মাস সময়! তারমধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরেই ভাবাদিঘির জটে আটকে রয়েছে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ। অবশেষে সেই জট কাটাতে উদ্যোগী হল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিপুল সংখ্যক জন সাধারণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এবার এই রেল প্রকল্প সংক্রান্ত একটি মামলায় বিরাট রায় দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের (Calcutta High Court)

টাইট ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে এদিন উচ্চ আদালতের (Calcutta High Court) তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যে সমস্ত জটিলতা মিটিয়ে, ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। একইসাথে বলা হয়েছে রাজ্য ও রেল উভয়পক্ষকে ওই বৈঠকে বসে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রঙ্গত হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলার বুকে গড়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি পর্যটন কেন্দ্র হল তারকেশ্বর ও বিষ্ণুপুর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন সেইসময় তিনি নিজে এই দুই ক্ষেত্রকে রেলপথে যুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বর্তমানে তারকেশ্বর থেকে গোঘাট পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা  চালু রয়েছে। গোঘাট থেকে যাত্রীরা এক ট্রেনে সরাসরি হাওড়ায় পৌঁছে যাচ্ছেন। জানা যাচ্ছে অনেক আগেই  বিষ্ণুপুরের ময়নাপুর থেকে বড় গোপীনাথপুর পর্যন্ত নতুন রেল লাইনে ‘ট্রায়াল রান’ হয়ে  সম্পন্ন হয়েছে।শুরু হয়েছে কামারপুকুর থেকে জয়রামবাটি হয়ে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত রেল লাইনের কাজও। কিন্তু, গোঘাট ও কামারপুকুরের মাঝে ভাবাদিঘিতে আটকে রয়েছে প্রকল্পের কাজ।

প্রসঙ্গত দিঘি বাঁচিয়ে রেল পথ নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই মামলা গড়ায় উচ্চ আদালতে (Calcutta High Court)। এদিন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। আদালত সূত্রে খবর, মামলার শুরুতেই মামলাকারীর আইনজীবী দাবি করেন, রাজ্য সরকার ও রেলের মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদের কারণে এই রেলপ্রকল্পের মাত্র দেড় কিমি পথ আটকে রয়েছে।

আরও পড়ুন: কায়দা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম? এবার এল চরম হুঁশিয়ারি

পাল্টা জবাবে ভাবাদিঘি আন্দোলনকারীদের আইনজীবী পাল্টা জানান, ১৭ একর জমি জুড়ে থাকা এই দিঘির ওপর  আড়াইশো মানুষের রুজিরুটির নির্ভর করছে।পাশাপাশি রয়েছে জলাভূমি সংরক্ষণের বিষয়টিও। আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনেই প্রধান বিচারপতি এদিন মন্তব্য করেন, ‘আড়াই লক্ষ মানুষের স্বার্থের কাছে আড়াইশো মানুষের স্বার্থ বড় হতে পারে না।’ এরপরেই রেলপ্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘তাছাড়া রেল প্রকল্পের জন্য দিঘির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রয়োজনে দিঘির উপর পিলার করে রেলপথ সম্প্রসারণ করা যায়। বঙ্গোপসাগরের উপর যদি রেলপথ গড়া যায়, তাহলে এক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?’

Sudden loadshedding in Calcutta High Court on Wednesday

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, নবান্ন গিয়ে মুখ্য সচিবের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য নাকি কোনো সহযোগিতা করছে না। সেই কারণে এই প্রকল্পের খরচ ৪৮০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৩০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। আদালতে (Calcutta High Court) উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি এদিন বললেন, ‘আদালত মনে করে যেহেতু এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন, তাই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সবরকম সাহায্য করা উচিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।’ এরপরই আগামী তিন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। যদিও দিঘিকে  বাঁচিয়ে রেলপথ নির্মাণের দাবিতে এখনও অনড় রয়েছেন ভাবাদিঘি বাঁচাও কমিটির সম্পাদক সুকুমার রায়।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর