টেবিলে বসে কাজের নামে ‘বাবুগিরি’! সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে একের পর এক, দশক ধরে জমে থাকা পাহাড় প্রমাণ মামলার রায় দিচ্ছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। সাথেই কড়া নির্দেশের পাশাপাশি দিচ্ছেন হুঁশিয়ারিও। বারংবার তার নির্দেশ ধমকের তীর থাকছে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের দিকে। এবার সেই ধারা অব্যাহত রেখে সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিল হাই কোর্ট (Calcutta High Court)।

সরকারি টেবিলে বসে ‘বাবুগিরি’ কেন? ‘বাবুগিরি’ দেখানো সরকারি অফিসারদের বেতনবৃদ্ধি-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেনই বা দেওয়া হবে? এমনই প্রশ্ন তুলে ভিজিল্যান্স কমিশনারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আদালতে বলেন, টেবিলের আড়ালে সরকারি অফিসারদের বাবুগিরি খুঁজবেন ভিজিল্যান্স কমিশনার। ১৫ দিনের মধ্যে তাকে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে হবে আদালতে। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘যারা নিজের কাজে অনুভূতিহীন। নিজের দায়িত্বটুকুও পালন করেন না কেন তাদের বেতন, ডিএ দেওয়া হবে৷ এই সব সরকারি অফিসারদের বেতনবৃদ্ধি-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পক্ষপাতী নয় এই আদালত। তারা নিজের কাজ করছেন কি না, তার তদন্ত করা প্রয়োজন।’’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে আশা শ্রীবাস্তব কলকাতার একটি স্কুলে চাকরি পান। দু’বছরের মাথায় তার চাকরি চলে যায়। কলকাতা হাই কোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি চাকরিতে ফের যোগ দেন। আশার অভিযোগ, ২০২০ সালে অবসরের পর ডিএ-সহ অন্যান্য পাওনা মেটানো হয়নি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বার বার নজরে এনেও কাজ হয়নি। আটকে রাখা হয় তার পাওনা টাকা। তার পরই হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন শিক্ষিকা।

এবিষয়ে বুধবার কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শককে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন , ‘‘শ্মশান ছাড়া আর যেখানেই থাকুন ওই সংশ্লিষ্ট ওই সরকারি কর্মচারীকে দুপুর ২টোর মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে হবে।’’ এরপরই কর্ম সিদ্ধ হয়। ধমক দেওয়ার কিছু ঘন্টার মধ্যেই আদালতে হাজির হন ওই অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারী। সাথেই ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মেটানো হয় শিক্ষিকার প্রায় ৩ বছর থেকে জমে থাকা পাওনা।

এদিন দুপুরে জেলা স্কুল পরিদর্শক আদালতে এসে জানান, আদালতের নির্দেশের পর মঙ্গলবার রাতেই টাকা পাঠানো হয়েছে। এরপর আরও ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি। প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, এত বছর কেন আটকে ছিল অবসরকালীন পাওনা? পরিদর্শকের উত্তর, নথি যাচাই করে ২ বছর আগে শিক্ষা দফতরকে পাঠানো হয়েছিল। তার পর তা ক্লার্কের টেবিলে পড়ে ছিল বলে জানা যায়।

justice1

বিচারপতি এদিন ভিজিল্যান্স কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘বাবু কালচার বন্ধ করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে সুবিধা পায় তা দেখতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।’’ মামলাকারীর আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এত দিন একই টেবিলে ফাইল পড়েছিল। পরিষেবা দিতে সরকারি অফিসাররা যে কতটা উদাসীন এই মামলায় তা প্রমাণিত।’’

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর