‘গিনিপিগের মতো মানুষের শরীরে…’! স্যালাইন কাণ্ডে নয়া মোড়! রাজ্যকে বিরাট নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ স্যালাইন কাণ্ডে (Saline Incident) উত্তাল বাংলা। কয়েকদিন আগে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই এই জল গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) অবধি। আগেই জানা গিয়েছিল, এই নিয়ে উচ্চ আদালতে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। এবার সেই শুনানিতেই হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার (Government of West Bengal)।

রাজ্যকে বিরাট নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)!

গত ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ কন্ট্রোলারের তরফ থেকে একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন রাজ্যের হাসপাতালে ওই স্যালাইন ব্যবহৃত হচ্ছে? ইতিমধ্যেই এই প্রশ্ন উঠেছে। এদিন হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি প্রশ্ন করেন, ‘গিনিপিগের মতো মানুষের শরীরে পরীক্ষার জন্যই কি এতদিন ওই স্যালাইন হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়নি?’

স্যালাইন কাণ্ডে ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর ও রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম (Justice TS Sivagnanam) ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, স্যালাইন উৎপাদক সংস্থার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সেটা নিয়ে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা করতে হবে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আরও পড়ুনঃ ভেঙে দেওয়া হবে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল? হাইকোর্টে দায়ের মামলা! শুনানি কবে?

জানা যাচ্ছে, এদিন হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি রাজ্যকে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কি তদন্ত শুরু করেছেন? সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে? রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, স্যালাইনের নমুন সংগ্রহ করে দু’টি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রথমটি রাজ্যের ল্যাবে হয়েছে এবং দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য মুম্বইয়ের এনএবিএল ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট স্যালাইন উৎপাদক সংস্থাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিনা সেটাও জানতে চায় হাইকোর্ট। রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, ‘প্রথমে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত। সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে’।

এদিকে জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে উত্তরবঙ্গের একজন ডাক্তার ওই স্যালাইন নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। উল্টে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। গত বছর মার্চে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কর্ণাটক সরকার ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। সেখানে রোগীর প্রাণহানি হয়। এই বিষয়ে সেই রাজ্যের সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানায়। রাজ্য সরকার কিন্তু এই নিয়ে কিছু করেনি’।

Calcutta High Court

ফিরোজ বলেন, হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার পর রাজ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ব্ল্যাকলিস্ট করে। স্বাস্থ্যসচিব কেন পদক্ষেপ নিলেন না? কেন প্রত্যেক হাসপাতালকে ওই সংস্থার স্যালাইন দেওয়া বন্ধ করার কথা বলা হল না? প্রশ্ন করেন তিনি। পাল্টা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল দাবি করেন, এটা কোনও নিষিদ্ধ ওষুধ না। বহু জায়গায় দেওয়া হয়। এমনকি আমার ওপরেও তা প্রয়োগ করা হয়েছে। এটা কোনও বাতিল ওষুধ না। নানান বিষয় বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি এদিন বলেন, ‘ফুড সেফটি অফিসার একটি হিমঘরে গেলেন। একটি জিনিস পরীক্ষা করে খারাপ পেলে ফ্রিজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পক্ষে তো ১০০টি দ্রব্য যাচাই করা সম্ভব নয়। ড্রাগ কন্ট্রোলার সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে স্যালাইন তৈরি বন্ধ রাখতে বলেছে মানে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। রাজ্য কেন পদক্ষেপ নিল না?’ মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কিনা এদিন জানতে চায় হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, ‘রাতারাতি এত কাজ করা সম্ভব হয়নি। পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে’।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর