বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নাবালিকার শ্লীলতাহানির মিথ্যে অভিযোগ! কলকাতা হাইকোর্ট অবধি সেই জল গড়াতেই অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তিন সাজাপ্রাপ্তের জামিন মঞ্জুর করে আদালত (Calcutta High Court)। এবার এই মামলার রায়ের কপি প্রকাশ্যে আসতেই ফের শুরু হয়েছে চর্চা।
মিথ্যে অভিযোগে মামলা! বিরাট বক্তব্য হাইকোর্টের (Calcutta High Court)
মঙ্গলবার রাতে উচ্চ আদালতের ওয়েবসাইটে ওই মামলার রায়ের কপি আপলোড করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগকারী তরুণীর মায়ের দেওয়া হলফনামার উল্লেখ আছে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কাজ করতে গিয়েই একদিন বহুতল থেকে পড়ে যান। ২০১৬ সাল থেকে তিনি শয্যাশায়ী ও পঙ্গু। সরকারের অনুদানের টাকায় কোনও মতে সংসার চলে।
অভিযোগকারিণীর মা জানান, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শাসকদলের স্থানীয় কিছু নেতা এসে নির্দিষ্ট তিন ব্যক্তির নামে মিথ্যে অভিযোগ (False Allegation) আনার কথা বলে। একইসঙ্গে আরও সরকারি প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গেই চলতে থাকে হুমকি। অভিযোগ না করলে এখন যে প্রকল্পে টাকা পাচ্ছেন সেটাও বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ মহালয়ার আগে মহাবদল! পর্ণার ধাক্কায় বেসামাল কথা-গীতা! বেঙ্গল টপারের নাম দেখলে মাথা ঘুরে যাবে
তরুণীর মা জানিয়েছেন, যে তিনজনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনার কথা বলা হয়েছিল তাঁরা প্রত্যেকেই শাসকদলের অংশ ছিলেন। পরবর্তীতে দলবদল করেন। যে কারণে স্থানীয়ভাবে দলের সংগঠন দুর্বল হয়ে যায়। একইসঙ্গে জানান, তাঁরা মিথ্যে অভিযোগ জানালেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনও সুবিধা তাঁদের দেওয়া হয়নি। শাসকদলের স্থানীয় কিছু নেতার কথায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা কথা বললেও সুরক্ষার খাতিরে তাঁদের নাম প্রকাশ্যে আনেনি নির্যাতিতার পরিবার।
এই মামলায় হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিনহা যা রায় দিয়েছেন সেটাকে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। উচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে এই বিষয়টি ‘ভয়ঙ্কর প্রবণতা’। একইসঙ্গে জানিয়েছে, নিরপরাধ ব্যক্তিদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্বলতা কোনও ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে না।
হাইকোর্টের (Calcutta High Court) কথায়, ‘এক্ষেত্রে ক্ষমার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। একজনের দারিদ্রতা অথবা অসহায়তা কি অন্য আরেকজনকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অধিকার দেয়?’ শুধু তাই নয়, ওই মামলার অর্ডারের কপি থেকে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হলেও অভিযোগকারিণী তরুণী ঘটনার সময়ে সাবালিকা ছিলেন। অভিযুক্তদের দাখিল করা জামিনের আর্জিতে দাবি করা হয়েছে, ওই তরুণী ডিভোর্সি। তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের নথি হিসেবে আদালতে প্রমাণও তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবার এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে দ্বিতীয়বার ওই তরুণীর ডিভোর্স হয়েছে। এদিকে বহরমপুর থানায় যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছিল ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে।
জানা যাচ্ছে, এসবকিছুর পর অভিযোগকারিণীর মায়ের ক্ষমার আর্জি খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। নির্দেশ দেওয়া হয়, এই মামলায় নিম্ন আদালতের বিচারক বিস্তারিত শুনানি করবেন। সেখানে অভিযোগকারিণী এবং তাঁর পরিবার সহ যাদের প্ররোচনায় মিথ্যে অভিযোগ করার দাবি করা হয়েছে তাঁরা প্রত্যেকে আসবেন বলে খবর।