বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পরীক্ষা শুরুর আগে মিনিট পাঁচেক বাকি। চরম উদ্বেগে পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে কোনও নির্দেশ না এলে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষায় আর বসা হবে না। ঠিক সেই সময়ই আসে একটি ফোন। জানানো হয়, কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) নির্দেশ দিয়েছে ওই ছাত্রকে পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে। সেই মতো পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র এক মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্র প্রবেশ করেন ওই পড়ুয়া।
আরও একাধিক নির্দেশ দিল হাইকোর্ট (Calcutta High Court)
জানা যাচ্ছে, আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন ওই ছাত্র। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (Burdwan University) এক কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়া সে। সংশ্লিষ্ট কলেজের অভিযোগ, ওই পড়ুয়া সেমিস্টারের কোনও ফি জমা করেননি। জরিমানা সহ ওই ছাত্রের ফি ৬০,০০০ টাকারও বেশি। ওই পড়ুয়া জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ শেষ পরীক্ষার সময় জানায় বকেয়া ফি জমা না করলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যাবে না। সেই কারণে অ্যাডমিট কার্ডের জন্য তার আবেদনও করা হয়নি।
এরপর জল গড়ায় হাইকোর্ট (Calcutta High Court) অবধি। সোজা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন ওই আইনের পড়ুয়া। নিজের মামলায় নিজেই সওয়াল করেছিলেন ওই ছাত্র। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চান বিচারপতি কৌশিক চন্দ।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলের ‘কীর্তি’ ফাঁস করল তৃণমূল! জেল খাটা বাংলাদেশিকে ছাড়াতে যান শাসকদলের নেতা? ভাইরাল ছবি
এই অবস্থায় ওই ছাত্র ভাবে, টাকা জোগাড় করা গেলেও শেষ মুহূর্তে এসে সে কি পরীক্ষা দিতে পারবে? কারণ তাঁকে অ্যাডমিট কার্ড (Admit Card) দেওয়া হয়নি। এদিকে মামলার পরবর্তী শুনানির দিনই রয়েছে পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার আগের দিনই অনলাইনে কলেজ ফি পাঠিয়ে দেন ওই ছাত্র। এরপর পরীক্ষার দিন ভোরবেলা আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে উচ্চ আদালতে আসেন। সেখানে দরকারি কাগজপত্রে সই করে ফের বর্ধমানের উদ্দেশে রওনা দেন।
পরীক্ষা শুরুর আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে পৌঁছে যান। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। অন্যদিকে বেলা ১১:৩০ নাগাদ বিষয়টি বিচারপতি চন্দের (Justice Kausik Chanda) নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি শুনানির ব্যবস্থা করা হয়। জাস্টিস চন্দ বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে এখনই বিষয়টি জানানো হোক। তাঁরা যেন শুনানিতে হাজির হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এসে বিচারপতি চন্দের এজলাসে উপস্থিত হন।
ওই পড়ুয়ার আইনজীবী সুদীপকুমার খাঁ বলেন, তাঁর মক্কেল ইতিমধ্যেই ফি জমা করেছেন। এবার তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেন, ওই পড়ুয়া কলেজের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু সে যদি পরীক্ষা দিতে চায় তাহলে কোনও আপত্তি নেই।
এরপরেই হাইকোর্ট বলে, ওই পরীক্ষার্থীকে এখুনি অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হোক। সেটা দেওয়া সম্ভব না হলেও তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে। বিচারপতি চন্দ বলেন, এখান থেকে কলেজকে ফোন করুন। বলুন, আদালত নির্দেশ দিয়েছে পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে। সেই মতো পরীক্ষা শুরুর মিনিট তিনেক আগে, ১১:৫৭ নাগাদ কলেজে ফোন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী। পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকেন ওই ছাত্র।
আরও পড়ুনঃ নিয়োগ দুর্নীতিতে জামিন পেয়েও শান্তি নেই! বাধ্য হয়ে এ বার বড় পদক্ষেপ মানিকের
হাইকোর্ট এদিন জানায়, ওই পড়ুয়া ৬০,০০০ টাকা জমা করা নিয়ে হলফনামা দেবে। টাকা পেয়েছে কিনা সেটা হলফনামা দিয়ে জানাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পড়ুয়ার অ্যাডমিট কার্ডের বিষয়ে হলফনামা দেবে বিশ্ববিদ্যালয়। আদালতের নির্দেশ, ওই পড়ুয়া পরীক্ষায় বসলেও আদালতের অনুমতি ছাড়া নিজের ফলাফল জানতে পারবে না। আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।
কলেজ ফি জমা না দেওয়ায় পরীক্ষায় বসা নিয়ে জটিলতা। অবশেষে হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশ মতো শেষ মুহূর্তে পরীক্ষায় বসল ছাত্র। তবে উচ্চ আদালতের অনুমতি ছাড়া পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারবে না। আগামী শুনানিতে কী হয় সেটাই এবার দেখার।