বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য জল থেকে রাস্তা রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষেত্রে রয়েছে ভুরিভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। বিগত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা। এরই মধ্যে এবার শিরোনামে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) সরকারি কৌঁসুলিদের প্যানেলে থাকা ‘অযোগ্য’ ও ‘অদক্ষ’ আইনজীবীরা। যা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেছেন একাধিক বিচারপতি। লাগাতার তাঁদের সমালোচনায় অস্বস্তি বাড়ছে রাজ্যের। একের পর এক মামলায় হেরে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে রাজ্য প্রশাসন।
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) জজের পছন্দের কৌঁসুলি চায় রাজ্য
পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে শাসক দল ঘনিষ্ঠ আইনজীবী নয় পরিবর্তে বিচারপতিদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন এমন ‘দক্ষ’ ও ‘যোগ্য’ আইনজীবীদের প্যানেলে আনতে মরিয়া রাজ্য সরকার। অযোগ্য আইনজীবীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী থেকে শুরু করে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার।
রাজ্যের এই বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর একটি নির্দেশ। গত মাসের ২১ জানুয়ারি একটি মামলায় সরকারি প্যানেলের আইনজীবীদের কাজের সমালোচনা করে তাঁর লেখা রায় আইনমন্ত্রীকে পাঠিয়ে কার্যত প্যানেল থেকে অযোগ্যদের বাতিলের বার্তা দিয়েছিল হাইকোর্ট।
চলতি সপ্তাহেও প্যানেলের আইনজীবীদের নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন জাস্টিস বসু। এটি মামলার শুনানির জন্য এজলাসে উপস্থিত রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বসু এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘উৎসাহী নন এমন আইনজীবীদের প্যানেলের রাখা হবে না। শিক্ষকদের বহু মামলা,কোথাও বকেয়া পেনশন,কোথাও মামলাকারীর অবসরের পর অন্য বকেয়া মেটানোর মামলা এইসব আইনজীবীদের জন্য আটকে থাকছে। যার ফল ভোগ করছেন বিচারপ্রার্থীরা।’
রীতিমতো বিরক্ত হয়ে এই মামলায় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল একদিন বা দু’দিন নয় এমন আইনজীবীদের দিনের পর দিন তলব করার পরেও তারা শুনানিতে হাজির পর্যন্ত থাকছেন না। হাইকোর্টে (Calcutta High Court) রাজ্যের সরকারি প্যানেলের অ্যাডভোকেট জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল ও জিপির পরে স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল রয়েছেন। পরবর্তী তালিকায় বিভিন্ন গ্রেডে কয়েকশো আইনজীবীর নাম রয়েছে।
অভিযোগ আদালতে (Calcutta High Court) দায়িত্বশীল কয়েকজন সরকারি কৌঁসুলি সরকারি মামলায় জুনিয়রদের দাঁড় করিয়ে দিয়ে, তাঁরা নিজেরা প্রাইভেট মামলায় বেশি ব্যস্ত থাকছেন। এই বিষয়ে অসন্তোষ থাকলেও মূল সমস্যা তাদের পরের ধাপে থাকা আইনজীবীদের নিয়ে। এমন এক দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানানো হয়েছে মামলার ব্রিফ না পড়েই শুনানিতে হাজির হচ্ছেন কেউ কেউ। আবার অন্য দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা শুনানিতেই হাজির থাকছেন না।
আরও পড়ুন: হাতে মাত্র একমাস! রাজ্য নয়, এবার কেন্দ্রের জবাব তলব করল হাইকোর্ট, কোন মামলায়?
এক আইনজীবীর কথায় প্যানেলের বিভিন্ন গ্রেডে থাকা আইনজীবীদের একাংশের দায়িত্বহীনতার জন্য বারবার আদালতের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে নানান বাধ্যবাধকতার কারণে সবাইকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশে কিছু আইনজীবীকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার জোর দেওয়া হচ্ছে উপরতলার যোগ্য, দক্ষ, সিনসিয়ার আইনজীবী নিয়োগের ব্যাপারে।
সূত্রের খবর, গভর্নমেন্ট প্লিডারের সঙ্গেই অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে বর্তমানে এক জনের জায়গায় তিন থেকে চার জনকে নিয়োগের ভাবনা চলছে। খোঁজ চলছে দক্ষ আইনজীবীর। রাজ্যের তরফে প্রাথমিক ভাবে বাছাই করা ১০–১২ জনের তালিকায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্যানেলভুক্ত কয়েকজন আইনজীবীর নাম রয়েছে।