বাংলা হান্ট ডেস্ক: মনের জোর, আত্মবিশ্বাস এবং সদিচ্ছার ওপর ভর করে যে সমস্ত অসম্ভবকে সম্ভব করে দেওয়া যায় তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন ইন্দোরের (Indore) এক যুবক। পাশাপাশি, তিনি হারিয়ে দিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকেও। যখন শারীরিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিরাই বিভিন্ন অজুহাতকে সামনে রেখে কঠিন কাজ এড়িয়ে যান ঠিক সেই আবহেই নিজের প্রতি অটুট বিশ্বাস রেখে স্বপ্নপূরণ করে ফেললেন ওই যুবক। সর্বোপরি, তিনি সকলের কাছে হয়ে উঠলেন এক অনুপ্রেরণার উৎস।
জানা গিয়েছে, ইন্দোরের যশ সোনকিয়া জন্ম থেকেই গ্লুকোমা রোগের শিকার ছিলেন। এমতাবস্থায়, মাত্র আট বছর বয়সেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন তিনি। যদিও, সেই ঘটনা তাঁর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নকে একটুও ম্লান করেনি। বরং, তিনি করে গিয়েছেন কঠোর পরিশ্রম। আর এভাবেই বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আইটি কোম্পানি মাইক্রোসফ্ট (Microsoft) ৪৭ লক্ষ টাকার প্যাকেজ সহ যশকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে শ্রী জিএস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (এসজিএসআইটিএস)-এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ২০২১ সালে এই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বি.টেক করেন সোনকিয়া। বর্তমানে তিনি প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকার প্যাকেজ সহ মাইক্রোসফ্ট থেকে একটি চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন।
এমতাবস্থায়, ২৫ বছর বয়সী যশ সোনকিয়া জানিয়েছেন যে, এই প্রস্তাব গ্রহণ করে তিনি শীঘ্রই ওই সংস্থার ব্যাঙ্গালোর অফিসে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগ দিতে চলেছেন। যদিও প্রাথমিকভাবে তাঁকে বাড়িতে থেকেই কাজ করতে বলা হয়েছে। এদিকে, এই নজিরবিহীন কৃতিত্বের পর, যশ রীতিমতো লাইমলাইটে চলে এসেছেন।
তবে, তাঁর এই সাফল্যের পথ মোটেও মসৃন ছিল না। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিশেষ প্রযুক্তির স্ক্রিনরিডার সফটওয়্যারের সাহায্যে বি.টেক. পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছিলাম। আমি কোডিং শিখেছি এবং মাইক্রোসফ্ট-এ আবেদন করি। অনলাইন পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের পর আমি ওই কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে নির্বাচিত হয়েছি।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, যশের বাবা যশপাল সোনকিয়া শহরে একটি ক্যান্টিন চালান। তিনি জানিয়েছেন, ছেলের জন্মের পরের দিনই তিনি জানতে পারেন যে, যশের জন্মগত গ্লুকোমা রোগ রয়েছে। যার কারণে যশের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত কম ছিল। তাঁর কথায়, “আমার ছেলের যখন আট বছর বয়স হয়, তখনই সে দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। কারণ সে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল।”
যশপাল আরও জানান যে, তিনি তাঁর মেধাবী ছেলেকে প্রথমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ান। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তাকে সাধারণ পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্য একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। যেখানে যশপালের এক বোন যশকে গণিত এবং বিজ্ঞানে বিশেষভাবে সাহায্য করেন। সর্বোপরি, ছেলের এই বিরাট কৃতিত্বের জেরে আবেগাপ্লুত হয়ে যশপাল জানান, “যশ আমার বড় ছেলে এবং তার সঙ্গে আমারও স্বপ্ন ছিল। অনেক সংগ্রামের পর অবশেষে তার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”