আরও বিপাকে সন্দীপ ঘোষ! CBI-এর কাছে সব সত্যি ফাঁস করল কে?

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের (Sandip Ghosh) নামে রয়েছে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ। সকলের নজর এড়িয়ে যা রমরমিয়ে চলছিল দিনের পর দিন। আরজিকর কান্ডের তদন্তে নেমেই সিবিআই গোয়েন্দারা একের পর এক ফাঁস করেছেন সমস্ত ঘটনা। আর এক্ষেত্রে সন্দীপ ঘোষের সহকর্মী আধিকারিকরাই পালন করেছে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সন্দীপের (Sandip Ghosh) বিরুদ্ধে বিরাট অস্ত্র তার সহকর্মীরাই

সিবিআই এর তদন্তকারী অফিসারদের দাবি সহকর্মী আধিকারিকদের দেওয়া সাক্ষ্যতেই বিদ্ধ হয়েছে সন্দীপ ঘোষ(Sandip Ghosh)। তদন্তকারীদের কথায় জাল নথি তৈরি করে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী সুমন হাজরা ও বিপ্লব সিংহ হাসপাতালের ওষুধ সহ চিকিৎসার আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বছরের পর বছর ধরে সরবরাহ করে গিয়েছেন। আর এইভাবেই তারা বেআইনিভাবে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে।

সাক্ষীদের দাবি সুমন এবং বিপ্লবের সংস্থার কাছ থেকে বাজার দরের থেকে প্রায় দ্বিগুণ দামে ঐ সমস্ত সামগ্রী কেনা হত। আর সরবরাহ হওয়া ওই সমস্ত সামগ্রীর মোট বিলের ১০% সরাসরি ঢুকতো সন্দীপের পকেটে। তদন্তকারীদের দাবি পুরো বিষয়টাতেই একেবারে নিখুঁত ছক কষা হয়েছিল। পরিকল্পনামাফিক ভাবে প্রথমেই ডাকা হতো টেন্ডার। সেই টেন্ডারে সামিল হত সন্দীপ (Sandip Ghosh) ঘনিষ্ঠ সুমন ও বিপ্লব।

পাশাপাশি জাল নথির মাধ্যমে তারা আরও কয়েকটি বেআইনি সংস্থাকে টেন্ডারের সামিল করত। কাগজে-কলমে ওই কোম্পানি গুলির অস্তিত্ব দেখানো হলেও বাস্তবে নাকি ওই নামে কোনো সংস্থাই ছিল না। এরপর এই ভুয়ো সংস্থাগুলির জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি দেখানো হত। পাশাপাশি সুমন ও  বিপ্লবের সংস্থার সরবরাহ করা সামগ্রীগুলির দাম কম দেখিয়ে বরাত নেওয়ার কাগজপত্র তৈরি করা হত। যদিও তা বাজারের অন্যান্য সংস্থার দামের থেকে দুই বা তিন গুণ বেশি হতো।

তদন্তকারীদের কথায় ওষুধ সহ অন্যান্য সামগ্রি কেনার বিষয়ে আরজি কর হাসপাতালে একটি কমিটি ছিল। ওই কমিটির অনুমোদনের পরেই সমস্ত সামগ্রী কেনা হতো। কিন্তু সন্দীপের দাপটে ওই কমিটির সদস্যরা কার্যত টুঁ শব্দ করতে পারতো না। শুধুমাত্র যেমন নির্দেশ আসতো সেই অনুযায়ী তারা বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করে দিত। তদন্তকারীদের দাবি হাসপাতালের প্রাক্তন সুপারসহ একাধিক পদাধিকারী ওই কমিটির সদস্য ছিলেন। এই আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে ওই কমিটির সদস্যদের একাধিকবার তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: রেডি রিপোর্ট কার্ড, আজই অ্যাকশনে মমতা!

প্রথম দিকে তারা মুখ খুলতে রাজি ছিলেন না, যদিও পরে এই আর্থিক দুর্নীতি মামলার তিন মূল অভিযুক্ত বিপ্লব সিংহ সুমন হাজরা ও সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সমস্ত নথি তাদের সামনে রাখা হয়। তারপরেই ধীরে ধীরে ওই কমিটির সদস্যরা সন্দীপের (Sandip Ghosh) বিরুদ্ধে একের পর এক সত্যি উগরে ফেলতে শুরু করেন। জানা যাচ্ছে তাঁদের সমস্ত বয়ান ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। সদস্যদের বয়ানের ভিত্তিতে সন্দীপকে হেফাজতে নিয়ে গিয়েও জেরা করা হয়েছে।

RG Kar case financial irregularities controversy over sanctions in charge frame against Sandip Ghosh

অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করেছিল সন্দীপ-ও। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে সে নিজেই বিভিন্ন অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে বলেই জানান তদন্তকারীরা।তদন্তকারীদের দাবি সুমন ও বিপ্লব দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছে।  তাই তারা দুজন অভিযুক্ত। কিন্তু সন্দীপের অন্যান্য সহকর্মী আধিকারিকরা এক্ষেত্রে লাভবান হয়নি। সন্দীপের চাপে পড়েই নথিতে সই করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা। এই কারণে তারা সন্দীপের বিরুদ্ধে মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর