ভারত ছেড়ে যেতে পারবেন না অনুব্রত মণ্ডল! পাসপোর্ট চাইল CBI

কলকাতাঃ বাংলায় তৃণমূল নেতাদের মধ্যে সর্বদা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন, এমন কোন ব্যক্তির নাম বলতে গেলে প্রথমেই আসে বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম। কখনো ‘খেলা হবে’, আবার কখনো ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’ ইত্যাদি হুঙ্কার দেওয়ার মাধ্যমে সর্বদাই খবরের শিরোনামে থাকেন কেষ্ট তথা অনুব্রত মণ্ডল। এদিন আবারো খবরের শিরোনামে এলেন তিনি। সিবিআই হাজিরা এড়ানোর মাঝেই তৃণমূল নেতার গতিবিধির ওপর নজর রাখার স্বার্থে তাঁর পাসপোর্ট চেয়ে বসলো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আর এতেই শুরু হলো নতুন এক বিতর্ক।

গত শুক্রবার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান অনুব্রত মণ্ডল। এরপরেই রাজারহাটের চিনার পার্কের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তিনি। শারীরিক ভাবে অসুস্থ তৃণমূল নেতাকে চিকিৎসকরা বর্তমানে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার নির্দেশ দেন। ফলে আশা করা হয় যে, সিবিআই হাজিরার হাত থেকে কিছুদিনের জন্য রেহাই পেতে চলেছেন অনুব্রত। কিন্তু আচমকাই তাঁর বিরুদ্ধে দুই মামলায় দরুন শনিবার বিকেল এবং রবিবার দুপুর, দুবেলাই তাঁকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্বভাবতই, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যে আদেও কি সিবিআই দফতরে হাজিরা দেবেন অনুব্রত? শেষপর্যন্ত অবশ্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত এড়ান তৃণমূল নেতা। শনিবার আইনজীবীর মাধ্যমে সিবিআই দফতরে চিঠি পৌঁছে দেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি চিঠিতে তিনি লেখেন যে, বর্তমানে যেখানে তিনি হাঁটতেই পারছেন না সেখানে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়াও সম্ভব নয়। এরপর রবিবারের হাজিরাতেও অনুপস্থিত থাকেন অনুব্রত।

পরবর্তীতে, আইনজীবী মারফত তৃণমূল নেতা চিঠি দিয়ে জানান, 21 শে মের পর কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রস্তুত তিনি। সিবিআইয়ের অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ এবং স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চে পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, 21 শে মের পর আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত স্থানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দেবেন তিনি।

তবে বর্তমানে যেন হাল ছাড়তে নারাজ সিবিআই। সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর অনুযায়ী, তৃণমূল নেতার গতিবিধির ওপর নজর রাখতে তাঁর পাসপোর্ট চেয়েছে সিবিআই। কিন্তু অপরদিকে, অনুব্রত মণ্ডল এদিন জানিয়েছেন যে, “আমার পাসপোর্ট নেই।” এরপরেই, অনুব্রতর বক্তব্য যাচাই করার জন্য এদিন রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসে যান সিবিআই অফিসাররা। এছাড়াও, অনুব্রত মণ্ডল বাইরে কোথাও গেলে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে নজর রাখার জন্য এয়ারপোর্ট সংস্থাকেও সতর্ক করেছে তারা।

প্রসঙ্গত, তিন সপ্তাহ পূর্বে কলকাতা সিবিআই দপ্তর থেকে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়ার পরেই তিনি বীরভূম থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এরপর সিবিআই দপ্তর-এ না গিয়ে শারীরিক অসুস্থতার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ফলে সিবিআই এর হাত থেকে বাঁচার জন্য শারীরিক অসুস্থতার বাহানা দিচ্ছেন, এমন অভিযোগে তৃণমূল নেতাকে বিদ্ধ করতে থাকে বিরোধীরা।

তবে তারই মাঝে, ইকো রিপোর্টে তাঁর হার্টে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ভালভ ও হৃদপেশীর সমস্যার পাশাপাশি স্থূলতা জনিত অসুখেও ভোগেন তিনি। এরপরেই, অনুব্রত মণ্ডলের শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁর দুই অণ্ডকোষে ধরা পড়ে সমস্যা। তৃণমূল নেতার চিকিৎসায় সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডও তৈরি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে গত শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান অনুব্রত মণ্ডল। যদিও চার সপ্তাহ পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি পুনরায় তাঁকে হাসপাতালে আসারও নির্দেশ দেয় এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরেই যেভাবে সিবিআই ও তৃণমূল নেতার মধ্যে লুকোচুরির খেলা শুরু হলো, তার মাঝে এদিনের পাসপোর্ট কাণ্ড এই বিতর্ক আরো বৃদ্ধি করবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

 


Sayan Das

সম্পর্কিত খবর