বাংলাহান্ট ডেস্ক : ২০২১ সালের ৫ মে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের পর তৃতীয় বারের জন্য বাংলার সিংহাসনে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পর থেকে আর কিছু হোক না হোক রাজ্যে গণ্ডগোল এবং অপরাধ হয়েছে বিস্তর। আর সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ। আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট -সুপ্রিমকোর্ট-সিঙ্গেল-সিঙ্গেল বেঞ্চ -ডিভিশান বেঞ্চ, কোনও খানে গিয়েই হালে পানি পায়নি রাজ্য। জারি থেকেছে সিবিআই তদন্তের নির্দেশই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় দফার সরকার গঠনের পর গড়ায়নি একটা বছরও। তারই মধ্যে রাজ্যের ঘাড়ে ঝুলছে হাফ ডজন সিবিআই তদন্ত। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা দিয়ে শুরু হয়ে এই তালিকায় নবতম সংযোজন বগটুই গণহত্যা মামলা। শুক্রবারই এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। অনেকেরই দাবি, সাম্প্রতিক অতীতে গোটা দেশেই এহেন ঘটনা নজিরবিহীন।
বিধানসভা ভোটের পর রাজ্যে ঘটা রাজনৈতিক হিংসা, খুন, ধর্ষণের মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। হাইকোর্টের নির্দেশেই চলছে এই তদন্ত। এরপর রাজ্যের এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারেও মামলা গড়িয়েছে সিবিআই অবধি। পরীক্ষায় না বসেই নিয়োগ করা হয়েছে শিক্ষক পদে এহেন উদাহরণ বাংলায় ভুরিভুরি। শিক্ষাক্ষেত্রে এহেন দূর্নীতি দেখে আদালত স্পষ্টতই জানিয়েছিল যে, এহেন ঘটনা ভূভারতেও আগে কেউ দেখেনি। শুধু শিক্ষক নয়, এসএসসি গ্রুপ সি, এবং গ্রুপ ডি পদে দূর্নীতিতেও তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। এরপর আসে হলদিয়া বন্দরে তোলাবাজির মামলা। সেই মামলাতেও কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতেই তদন্তভার ছাড়ে কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও রাজ্য তখনও দাবি করে যে রাজ্য পুলিশই করতে পারত এই তদন্ত। কিন্তু তাতে কান দেয়নি আদালত।
এবার বগটুই গণহত্যা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তারপর থেকেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূলের দাবি রাজ্যকে হেনস্তা করতেই এই চক্রান্ত চালাচ্ছে বিজেপি। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, ‘রাজ্য সরকার যেখানে সমস্ত ব্যবস্থা নিচ্ছেন সেখানে সিবিআই কেন? বিজেপির দুই ভাই, ইডি আর সিবিআই। সিবিআই নিরপেক্ষ নয়। ওরা বিজেপির পক্ষে। হাথরাশ, উন্নাও, লখিমপুরে গণহত্যা হলেও সিবিআই হয় না কেন? সবাই বিজেপির কেনা। সিবিআইও।’
এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এই মামলাতেও আবার যেন বিরোধীতা করে সুপ্রিমকোর্টে না দৌড়োয় নবান্ন। যেখানে খোদ আদালত রাজ্যের প্রশাসনের উপর অনাস্থা প্রকাশ করছে সেখানে কি এটাই প্রমাণ হয় না যে রাজ্যে আইনের শাসন নেই? মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার একবছরের মধ্যেই কেন একডজন সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে হল আদালতকে?’
উল্লেখ্য, এই বাগটুই ইস্যুতে সুপ্রিমকোর্টে যেতে পারে নবান্ন, এই আশঙ্কা করেই আগেভাগেই সুপ্রিমকোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন এক আইনজীবী। তাঁর দাবি, যাতে সুপ্রিমকোর্টে একতরফা তৃণমূলের দিকে না যায় রায়, সেই কারনেই আগে ভাগে এই পদক্ষেপ।