বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় দীর্ঘ ২ বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। তবে প্রাথমিক মামলায় গত বছরের অক্টোবরে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এই মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তার ছত্রে ছত্রে নাম রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
অযোগ্যদের তালিকায় পার্থর (Partha Chatterjee) হাতের লেখা
অভিযোগ, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (Partha Chatterjee)। ওই মামলার তদন্তে নেমেই তদন্তকারীদের হাতে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই সমস্ত তথ্যই তাঁরা চার্জশিট আকারে জমা দিয়েছেন আদালতে। ১৯ পাতার ওই চার্জশিটে দাবি করা হচ্ছে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকার উপর নিজে হাতে বিভিন্ন ‘টুকরো’ নির্দেশমূলক মন্তব্য লিখে দিতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী।
বিকাশ ভবনে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ওই সমস্ত অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা উদ্ধার করেছিল সিবিআই। সেখানেই পার্থর হাতের লেখা ছিল বলেই জানা গিয়েছে। যদিও সেই আসল লেখা বাজেয়াপ্ত করতে পারিনি সিবিআই। তাদের হাতে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রীর (Partha Chatterjee) হাতের লেখার অনুলিখন। বছর দুয়েক আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রাথমিক মামলার তদন্তে বিকাশ ভবনে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল সিবিআই। সেখানকার গুদামঘর থেকেই উদ্ধার করা হয় চাকরিপ্রার্থীদের নামের একটি তালিকা।
সিবিআই-এর চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে ওই তালিকায় ৩২৪ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম ছিল। কিন্তু পরে তালিকা খতিয়ে দেখা যায় আসলে সেখানে প্রার্থী সংখ্যা ৩২১ জন। প্রাথমিক স্কুলে এই সমস্ত প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন কোনো না কোনো রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, ওই তালিকায় প্রার্থীদের নাম এবং রোল নাম্বারের পাশাপাশি সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামও উল্লেখ করা ছিল বলে দাবি সিবিআই এর।
চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছে ওই প্রার্থী তালিকায় এক একজন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে একের রকম মন্তব্য লিখে দিতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) নিজে। কোন নামের উপর তিনি লিখতেন ‘একে নিতেই হবে’। কোন নামের উপর লিখতেন’ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে তবে’। আবার কোনো কোনো প্রার্থীর নামের পাশে তিনি লিখতেন খুব খুব দরকারি। লেখা থাকত ওই সমস্ত প্রার্থীদের জেলার নামও।
আরও পড়ুন: DIB বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ! মমতার নির্দেশে এবার ঘুম উড়ল রাজীব কুমারের
তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই ওই ৩২১ জন প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার সুপারিশ শেষে পৌঁছেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। শিক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই নামের তালিকার হার্ডকপি এবং সিডি গিয়েছিল বিকাশ ভবনে। জানা যাচ্ছে বিকাশ ভবনে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের পদে থাকা সুপর্ণা নিয়োগী নামের একজন মহিলা, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতের লেখা থেকে সেই সমস্ত মন্তব্য অন্য একটি কাগজে নকল করে নিতেন। যা সিডির সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হতো নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের কাছে।
মানিক তখন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। সিবিআইয়ের চার্জশিটে জানানো হয়েছে, সুপারিশের ওই ৩২১ জন চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে ১৩৪ জন ২০১৪ সালের টেট এর মাধ্যমে চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে সিবিআই এদিন জানিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে লেখা মন্তব্যের কাগজ উদ্ধার করা যায়নি। কারণ ওই লেখা নকল করেই তা আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হতো। এই মামলার অন্যতম সাক্ষী প্রবীর-সুপর্ণা সহ একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য জানতে পেরেছে সিবিআই।