সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন তথা সিবিএসই তাদের নতুন পাঠ্যক্রম ঘোষণা করলো আর এই ঘোষণার কিছু মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হলো রাজনৈতিক চাপানউতোর। সূত্রের খবর, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইতিহাস, এই দুই বিষয়ের সিলেবাস পরিবর্তন করেছে বোর্ড। এখানে বেশ কিছু চ্যাপ্টারের যেমন সংযোজন ঘটেছে, ঠিক তেমনি ভাবে বাতিলও হয়েছে কয়েকটি।
বাতিলের তালিকায় ধর্মনিরপেক্ষতা, ‘গণতন্ত্র এবং বিবিধ’ সম্পর্কিত অধ্যায়গুলি রয়েছে। ক্লাস টুয়েলভ-এর সিলেবাস থেকে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ সহ মুঘলদের ইতিহাস এবং শিল্প বিপ্লবের মত চ্যাপ্টার গুলিও বাতিল করা হয়েছে আর এই নতুন পাঠ্যক্রম সামনে আসার পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। এখানেই শেষ নয়, ‘সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস’ সহ বিখ্যাত উর্দু কবি ফৈজের দুটি কবিতার অংশ বাদ দেওয়া হয় সিলেবাস থেকে।
‘সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস’ নামক চ্যাপ্টারে আফ্রিকা ও এশিয়া সংক্রান্ত ইসলামিক বিভিন্ন শাসকদের শাসনকাল সম্পর্কে পড়ানো হতো। কিন্তু বর্তমানে সিলেবাস থেকে বাদ পড়ার কারনে নতুন পাঠ্যক্রমে পড়ুয়ারা এ সকল ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে না।
সিবিএসই বোর্ড দ্বারা নতুন পাঠ্যক্রম সামনে আসার পরই কেন্দ্র সরকারের সমালোচনায় নামে বিরোধী দলগুলি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “সিবিএসই বোর্ড গেরুয়াকরনের নিকট বশ্যতা স্বীকার করেছে। কিন্তু আমরা তা কখনোই করব না।” এছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “ইতিহাস যদি পড়ুয়াদের খাপছাড়া ভাবে পড়ানো হয়, তবে তাদের ইতিহাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা কখনোই গড়ে উঠবে না।”
অপর এক তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারের কথায়, “মোদি সরকারের কাছে ‘গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র’ বিষয়টি সর্বদাই অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে এবং সেই কারণেই সিবিএসই বোর্ড দ্বারা এগুলিকে সিলেবাস থেকে বাতিল করা হয়েছে। তাদের মতে, শুধুমাত্র বাবা রামদেবদের ইতিহাস পড়লেই হবে।” কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের মানসিকতা মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের ইতিহাসকে যারা বিভক্ত করতে চাইছে, তাদের কখনোই ক্ষমা করা উচিত নয়। আমাদের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
যদিও বিজেপি এ সকল অভিযোগকে পাত্তা দিতে নারাজ। বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, “দু’বছর ধরে করোনার কারণে পড়ুয়াদের ওপর সিলেবাসের চাপ ক্রমশ বাড়ছিলো। তাই তাদের চাপ কমানোর জন্য সিলেবাসে কাটছাঁট করা হয়েছে।” তবে এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।