বাংলাহান্ট ডেস্ক : নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নতুন মোড় নিল। গুমনামি বাবার (Gumnami Baba) ডিএনএ-র নির্যাস প্রকাশ্যে জানাতে অস্বীকার করল সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরি। সংস্থার তরফ থেকে দাবি করা হয়, এই ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট সবার জানালে বিঘ্নিত হতে পারে দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নাকি বদলে যেতে পারে রাজনীতির রসায়ন। নতুন করে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে বহু দেশের সঙ্গে!
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhas Chandra Bose) সঙ্গে ফৈজাবাদের গুমনামি বাবা বা ভগবানজির অদ্ভুত মিল নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেন অনেকে। তিনি নাকি ফিরে এসেছিলেন ভারতেই। সাধু ভগবানজিই নেতাজি কি না সেটা জানতে মুখার্জি কমিশন গুমনামি বাবার ডিএনএ পরীক্ষাও করায়। ফরেনসিক ল্যাবরেটরি থেকে দেড় পাতার একটি রিপোর্টে জানানো হয় নেতাজির সঙ্গে ভগবানজির কোন মিল নেই। পরে বিচারপতি মনোজ মুখোপাধ্যায় পরিস্কার করে জানান, তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি।
এরপর, ‘মিশন নেতাজি’র সদস্যরা সক্রিয় হন। সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ মিশনের সক্রিয় সদস্য সায়ক সেন গুমনামি বাবার ডিএনএ-র ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট জানতে আরটিআই করেন। ডিরেক্টরেট অফ ফরেনসিক সায়েন্সেস সার্ভিসেসের কলকাতা শাখার পক্ষে তিনদিন আগে জানানো হয় গুমনামি বাবার ডিএনএ টেস্টের ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট ল্যাবরেটরিতেই রয়েছে।
সেটি থাকলে যে কোনও ডিএনএ বিশেষজ্ঞ ‘সিকোয়েন্স’ ম্যাচ করিয়ে দু’টির সঙ্গে মিল করাতে পারেন। নেতাজির বাবা ও মায়ের পরিবারের অনেকেরই যেহেতু এই ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রয়েছে, তাই ভগবানজির সঙ্গে ‘ম্যাচ’ অর্থাৎ সজ্জার বিন্যাস একত্রিত করা অসম্ভব ছিল না। বলা ভাল, দেশের তাবড় ডিএনএ বিশেষজ্ঞরা রাজিও ছিলেন।
মিশন নেতাজি’র পক্ষে আরটিআইয়ে জানতে চাওয়া হয় কয়েকটি বিষয়
১) মুখার্জি কমিশনের তত্ত্বাবধানে গুমনামি বাবার যে ডিএনএ টেস্ট করা হয়, তার ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট কলকাতা সিএফএসএল-এ রয়েছে কি না।
২) না থাকলে রিপোর্ট ধ্বংসের সরকারি কপি।
৩) রিপোর্টটি থাকলে যেহেতু মুখার্জি কমিশনে তা দেওয়া হয়নি এবং যেহেতু মুখার্জি কমিশনেরও অবলুপ্তি ঘটেছে, তাই তৃতীয় পক্ষের হাতে সেগুলি যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
একমাসের আগে জানানো হয়,
১) কোনও এক গুমনামি বাবার ডিএনএ টেস্টের ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট এই ল্যাবরেটরিতেই রয়েছে।
২) আরটিআই অ্যাক্ট, ২০০৫-এর ৮(১)(এ) ও (ই) ছাড়াও ১১(১) ধারায় নির্দিষ্ট এই রিপোর্টের কপি হস্তান্তর করা যাবে না।
এই তিনটি ধারার উল্লেখ করাতেই বিতর্ক ও রহস্য আরও গভীর হয়েছে। ৮(১)(এ) ধারা অনুযায়ী ভারতের সার্বভৌমত্ব ও সংহতি, নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হলে, রাষ্ট্রের কৌশলগত, বিজ্ঞানগত বা অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিঘ্নিত হতে পারে বা অপরাধের উসকানি দেয়, এমন তথ্য দেওয়া যাবে না। একই ধারার (ই) উপধারায় আবার বলা হয়েছে, বৃহত্তর জনস্বার্থ না থাকলে দেওয়া যাবে না। প্রথম উপধারা দেখিয়ে কেন এক ‘সাধারণ সাধু’র রিপোর্ট দিতে এত অনীহা, প্রশ্ন সেখানে। সায়ক এমনও বললেন, ‘‘জাস্টিস মুখার্জির সঙ্গে দেখা করেছিলাম। উনি আমাকে বলেইছিলেন, তিনি প্রায় একশোভাগ নিঃসন্দেহ ছিলেন যে, রিপোর্ট জাল করা হয়েছিল। নাম কা ওয়াস্তে দেড় পাতার একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়। কিন্তু যেহেতু সরকারি রিপোর্ট, তাই বেসরকারিভাবে চেক করার ছিল না।’