‘যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর’! মামলা হলেও শাস্তি নেই কেন? প্রশ্নের মুখে ইডি

বাংলা হান্ট ডেস্ক : বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডির (Enforcement Directorate) তদন্তে আর্থিকের কেলেঙ্কারিতে একের পর এক নাম জড়িয়েছে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনের এক দশক পেরিয়ে আসার পর মামলা হলেও কেন শাস্তি হয়নি অধিকাংশ অভিযুক্তদের? প্রশ্ন উঠছে ঝুড়িঝুড়ি মামলা দায়ের হলেও শাস্তি কেন এত নগণ্য?

প্রশ্নের মুখে ইডি (Enforcement Directorate)

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রকের আধিকারিকদের পক্ষ থেকেও কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে (Enforcement Directorate)। জানতে চাওয়া হয়েছে কনভিশন রেট কত? কেনই বা এত কম? ইডির (Enforcement Directorate) বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ বিগত কয়েক বছরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে ইডি। আর এর পিছনে আসল কলকাঠি নেড়েছে বিজেপি অর্থাৎ মোদি সরকার।

তাই বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ এই গ্রেফতারি পুরোটাই মোদি সরকারের উদ্দেশ্য প্রণোদিত । বিজেপির নির্দেশেই বিরোধীদের কোণঠাসা করতে, ভয় দেখাতে এবং চাপে ফেলতে দশ বছর ধরে এই একই কাজ করে চলেছে ইডি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। কারণ শুধু ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলে ঢোকানোই সার। এখনও পর্যন্ত শাস্তি হয়নি অধিকাংশেরই। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়াও পেয়ে গিয়েছেন অনেকে।

একাধিক রাজ্যের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকানো হলেও শেষ পর্যন্ত কোন সাজাই হচ্ছে না তাঁদের। বেশ কয়েক মাস জেলে কাটানোর পর আদালতের নির্দেশেই আবার জেলের বাইরে বেরিয়ে আসছেন তাঁরা। দিল্লির মনীষ সি থেকে শুরু করে তেলেঙ্গানার কবিতা কিংবা বাংলার অনুব্রত মণ্ডল প্রত্যেকেই দীর্ঘ দিন জেলে কাটানোর পর এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্ত আকাশের নিচে।

আরও পড়ুন : বদলে যাচ্ছে সরকারি কর্মীদের পেনশনের নিয়ম? জারি নির্দেশিকা

কিন্তু এত কিছুর পরেও যদি কেন্দ্রের কাছেই ইডিকে কথা শুনতে হয় তাহলে তা হজম করা সত্যিই কঠিন। বিষয়টা খানিকটা যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর গোছের অবস্থা। সরকারি সূত্রের খবর ২০১৪ সাল থেকে বিগত ১০ বছরে বেআইনিভাবে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগে মোট ৫ হাজার ২৯৭টি মামলার রুজু করা হয়েছে।

যার মধ্যে আদালতে শুনানি সমাপ্ত হয়েছে মাত্র ৪৩টি মামলার। আর সাজা হয়েছে মাত্র ৪০টি মামলায়। বাকিগুলির বিচারপর্ব এখনও শুরুই হয়নি। মোদী সরকার আসার পর বিগত দশ বছরে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ৮ হাজার ৭১৯ মামলা রুজু করা হয়েছে। অথচ শাস্তি হয়েছে মাত্র ৭৮৯টি মামলায়। তার মধ্যে মোট ৫৬৭ মামলার অভিযুক্তরা মুক্তি পেয়েছেন প্রমাণের অভাবে।

আরও পড়ুন : ঘিঞ্জি এলাকায় অগ্নিকান্ড কীভাবে মোকাবিলা করবেন? মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দায়িত্ব বাড়ল মনোজ ভার্মার

তবে ২০২১ এবং ২০২২ এই ২ বছরে সবচেয়ে বেশি আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারের মামলা রুজু হয়েছে। সংখ্যাটা প্রায় ২ হাজারের বেশি । জানা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সবথেকে বেশি আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা রুজু করা হয়েছে দিল্লিতে—৯০টি তারপরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র -৪৩ আর তৃতীয় স্থানেই রয়েছে বাংলা-৪২টি। চতুর্থ স্থানে রাজস্থান-২৪ টি।

ED 1

আর আশ্চর্যজনক ভাবে এই সময়কালে উল্লিখিত রাজ্যগুলিতে রয়েছে বিজেপি বিরোধী সরকার।শুধু দিল্লিতে প্রায় সকলকেই সুপ্রিম কোর্ট জামিনে মুক্তি দিয়েছে সবাইকে। বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় বারংবার সুপ্রিম কোর্ট তদন্তকারী এজেন্সিগুলিকে ভর্ৎসনা করেছে। একইভাবে বাংলার বিভিন্ন দুর্নীতি মামলা গুলিতেও সিবিআই কিংবা ইডি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করলেও সেই তুলনায় তদন্তের অগ্রগতি, চার্জ ফ্রেম, অথবা শুনানি শুরু করার প্রবণতা একেবারে নেই বললেই চলে।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর