প্রশ্নের মুখে রাজ্যের নারী নিরাপত্তা! রাজ্যকে ভর্ৎসনা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দেশের অন্যান্য রাজ্য গুলির তুলনায় নারী নিরাপত্তার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) অবস্থান ঠিক কোথায়? তা নিয়ে ইতিপূর্বে প্রশ্ন উঠেছে একাধিকবার। আরজিকর কান্ডের পর থেকে নারী নিরাপত্তায় বিষয়ে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য (West Bengal) সরকার। এবার এই নারী-নিরাপত্তা নিয়েই পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনল কেন্দ্রীয় সরকার।

 নারী নিরাপত্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকারকে আক্রমণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার তাদেরকেই কাঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর  অভিযোগ মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ করছে না। বুধবার দিল্লিরসাংবাদিক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকারের বিরুদ্ধে এমনই এক গুরুতর অভিযোগ এনেছেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী।

তাঁর অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে মোট ৪৯ হাজার ৫৮০ টি ধর্ষণ ও পকসো মামলা বকেয়া রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার ধর্ষণ ও পকসো মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ১১টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করার বিষয়ে পদক্ষেপ করেনি। প্রসঙ্গত ২০২২ সালের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’-র রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় পশ্চিমবঙ্গে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার মাত্র ৮.৯ শতাংশ। চিন্তাজনক ভাবে কম।

এখানেই শেষ নয় পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অপরাধের ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩০টি মামলার এখনও কোনো কিনারা হয়নি। যা সারা দেশের নিরিখে সবচেয়ে বেশি। তবে জানা যাচ্ছে, মোট মামলার মধ্যে ২.৫ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আর মোট ৯৭.৫ শতাংশ ঝুলে রয়েছে। জানা যাচ্ছে এই হারও দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন: কলকাতায় আর চলবে না হলুদ ট্যাক্সি? একগুচ্ছ দাবি নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রীর দ্বারস্থ ফোরাম

প্রসঙ্গত কলকাতার আরজিকর কান্ডের পর গত ২২ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে ধর্ষণের ঘটনার মোকাবিলায় কঠোর আইন, কড়া শাস্তি ও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালুর দাবি জানিয়েছিলেন। এপ্রসঙ্গেও রাজ্যকে একহাত নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন ধর্ষণ ও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন রোখার আইন পকসো মামলায় ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট প্রকল্প রয়েছে।

এই প্রকল্পে ৬০ শতাংশ খরচ চালায় কেন্দ্রীয় সরকার। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোট ১২৩টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বরাদ্দ হয়েছে। যার মধ্যে ২০টি বিশেষ পকসো কোর্ট। বাকি ১০৩টি ধর্ষণ ও পকসো মামলার কোর্ট। কিন্তু রাজ্য সরকার ২০২৩-এর জুন পর্যন্ত কোনও কোর্টই চালু করেনি। তারপর রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে সাতটি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করার কথা জানিয়েছে।

West Bengal

সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোট ১৭টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বরাদ্দ হয়। যার মধ্যে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৬টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু হয়েছে। যদিও ১১টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিষয়ে রাজ্য সরকার এখনও পদক্ষেপ করেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর আরও অভিযোগ কেন্দ্র বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার মহিলা হেল্পলাইন (১৮১ নম্বর) চালু করেনি।

প্রথমত এ বিষয়ে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের চাপানউতর নতুন নয়। এর আগে একাধিকবার এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সাথে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি বিনিময় হয়েছে। এ বিষয়ে বহুবার কেন্দ্রের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন এই রাজ্যে অনেক ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ও পকসো আদালত তৈরি করা হয়েছে। তবে সেটা রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকেই।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর