বেসরকারি নয়, সরকারি স্কুলেই আগ্রহ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়াদের! কেন্দ্রের রিপোর্টে উজ্জ্বল বাংলার মুখ

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত কয়েক দিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) সরকারি স্কুলগুলির বেহাল দশা নিয়ে উঠে এসেছে বেশ কিছু উদ্বেগজনক রিপোর্ট। এরই মধ্যে এবার পশ্চিমবঙ্গের সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলি নিয়ে এক দারুন সুখবর দিল কেন্দ্রীয় রিপোর্ট। সেখানে বলা হচ্ছে ইদানিং রাজ্যের পড়ুয়াদের মধ্যে বেসরকারি নয় বরং সরকারি (Government School) এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতেই পড়ার আগ্রহ বাড়ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের এই আগ্রহ দেখে বেজায় খুশি রাজ্য সরকার।

সরকারি স্কুলেই আগ্রহ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) পড়ুয়াদের

কেন্দ্রের রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) ৯০ শাতাংশ পড়ুয়াই এখন সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল গুলিতে পড়ছে। বাংলায় এই হার অনেক বেশি হলেও জাতীয় স্তরে সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পড়ার প্রবণতা খুব একটা ইতিবাচক নয়। কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের অন্যান্য রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের গড় ৫১ শতাংশ। যদিও বিগত কয়েক বছরের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গেও সরকারি স্কুলগুলিতে ভর্তির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।

রিপোর্ট বলছে গত দু’বছরে দেশ জুড়ে সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ার প্রবণতা কিছুটা কমেছে। এই তালিকায় নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের-ও। জানা যাচ্ছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ভর্তির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬৫ লক্ষ। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়াদের ভর্তির সংখ্যা চার শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬০ লক্ষ। জাতীয় স্তরের পরিসংখ্যান বলছে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে দেশজুড়ে সরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের ভর্তির সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৩২ লক্ষ। যা ২০২৩ ২৪ শিক্ষাবর্ষে এসে নেমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৫ লক্ষে। অর্থাৎ পরিসংখ্যানের হিসেবে জাতীয় স্তরে সরকারি স্কুলগুলিতে ভর্তির হার কমেছে প্রায় দশ শতাংশ।

পড়াশোনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়তে থাকার কারণ কি? ইদানিং সরকারি স্কুলের প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহের জন্য অনেকেই দায়ী করছেন রাজ্যে চালু থাকা একাধিক সরকারি প্রকল্পগুলিকেই। বলা হচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মস্তিষ্কপ্রসূত সরকারি প্রকল্পের সুফল এই কেন্দ্রীয় রিপোর্ট।

প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ক্ষমতায় আসার পর থেকে একাধিক সরকারি প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার মধ্যে অন্যতম কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, মেধাশ্রী, তরুনের স্বপ্ন।  এছাড়াও পড়ুয়াদের জন্য রয়েছে একাধিক সরকারি বৃত্তি।  প্রশ্ন উঠছে এই সমস্ত সরকারি প্রকল্পই কি পড়ুয়াদের সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ার জন্য আগ্রহী করে তুলছে?

আরও পড়ুন: ট্যাব দুর্নীতির পর এবার বিরাট কারচুপি মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পে

রাজ্যের (West Bengal) শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এপ্রসঙ্গে দাবি করেছেন,’আমাদের রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক ভালো’। তার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতিত্ব দিয়েই এদিন তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর  নিয়মিত নজরদারিতে এই রাজ্য শিক্ষার দিক থেকে এখন গোটা দেশকে একটাই কথা বলছে, ‘এগিয়ে বাংলা।”

West Bengal

কেন্দ্রের এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে রাজ্যের স্কুলছুটদের সংখ্যাও। রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল গুলিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে গত এক বছরের স্কুল ছুটের সংখ্যা শূন্য, অর্থাৎ গত ১ বছরে রাজ্যে একজন পড়ুয়াও স্কুলছুট হয়নি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোন পড়ুয়া স্কুল ছাড়েননি। পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে স্কুল ছুটের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি, চন্ডিগড়, ওড়িশা,তেলেঙ্গানা,মহারাষ্ট্র,কেরল এবং তামিলনাড়ু। তবে উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে স্কুল ছুটের হার শূন্য, শুধুমাত্র দক্ষিণের রাজ্য গুলিতেই অর্থাৎ তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু এবং কেরলে।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর