বাংলা হান্ট ডেস্ক : এক সাধারণ তরুণ থেকে হয়ে উঠেছিলেন এক কিংবদন্তি সম্রাট। গড়ে তুলেছিলেন উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য মৌর্য সাম্রাজ্য (Mauryan Empire) তিনি হলেন মহা পরাক্রমশালী বীর এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (Chandragupta Maurya)। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ৩৪০ খ্রিস্টপূর্ব-২৯৮ খ্রিষ্টপূর্ব পর্যন্ত। তিনি গ্রিকদের কাছে সান্দ্রোকোত্তোস বা আন্দ্রাকোত্তাস নামে সুপরিচিত ছিলেন।
যে শক্তিশালী নন্দরাজের মুখোমুখি হতে স্বয়ং আলেকজান্ডারের সৈন্যরাও সাহস পায়নি সেই নন্দরাজ এই অসীম সাহসী তরুণের কাছে পরাজিত হয়ে মগধ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধের মুকুট নিজের মাথায় পরেন। সম্রাট হওয়ার পর সর্বপ্রথম তিনিই বৃহত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যকে এক শাসনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সাফল্যের সাথে শাসন করার পর, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সমস্ত দুনিয়ার আনন্দ ছেড়ে দেন এবং নিজেকে একজন জৈন সন্ন্যাসী রূপে পরিণত করেন এবং কথিত আছে যে পরবর্তীকালে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন শেষ করেছিলেন।
পাটালিপুত্রের অধিবাসীরা নন্দরাজ, অত্যাচারী ধননন্দের উপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। ঠিক সেই সময় আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে আলেকজান্ডার ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ও খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে তিনি সিন্ধু নদ অতিক্রম করে তক্ষশিলায় প্রবেশ করেন। চন্দ্রগুপ্ত নন্দরাজকে উৎখাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রিকদের সাহায্য পাওয়ার লক্ষ্যে আলেকজান্ডারের শিবিরে পৌঁছে যান। চন্দ্রগুপ্তের উদ্ধত ব্যবহার আলেকজান্ডারকে ক্ষুব্ধ করে এবং তিনি চন্দ্রগুপ্তকে মৃত্যু দণ্ডাদেশ প্রদান করে থাকেন।
চন্দ্রগুপ্ত কৌশলে গ্রিক সৈন্যদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বিন্ধ্যাপর্বতের গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় নন্দরাজ কর্তৃক অপমানিত হয়ে চাণক্য ও সেই জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং পর্যায়ক্রমে এই বনে চাণক্য এবং চন্দ্রগুপ্তের সাক্ষাত্ হওয়ার পর, উভয়ই নন্দরাজের পতনের লক্ষ্যে একমত হন। চন্দ্রগুপ্ত ধননন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
নন্দরাজকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত নিজের সাম্রাজ্য প্রভূতভাবে বিস্তার করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং উত্তরভারতে গ্রিক সৈন্যদের উৎখাত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সাত জন সেনাপতি নিজেদের মধ্যে রাজ্য ভাগ করে নিয়েছিল এবং ভারতবর্ষ পড়েছিল সেনাপতি প্রথম সেলুকাস নিকেটারের ভাগ্যে। মূলত ব্যাক্ট্রিয়া ও সিন্ধু নদ পর্য্যন্ত বিস্তৃত সাম্রাজ্যের পূর্বদিকের অংশ সেনাপতি প্রথম সেলুকাস নিকেটরের অধিকারে আসে।
৩০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। জানা যায় যে সংঘর্ষে পরাজিত হয়ে প্রথম সেলুকাস নিকেটর চন্দ্রগুপ্তকে আরাখোশিয়া, গেদ্রোসিয়া ও পারোপামিসাদাই ইত্যাদি সিন্ধু নদের পশ্চিমদিকের বিশাল অঞ্চল অঞ্চল সমর্পণ করেছিলেন এবং নিজ কন্যা হেলেনা কে তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।