বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ইন্দোর? নাকি ব্যাটারদের বধ্যভূমি? গতকাল থেকে বর্ডার গাভাস্কার ট্রফি ২০২৩-এর তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি যারা যারা লাইভ দেখছেন তাদের মনে এই প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। এই পিচ যেখানে ১ সেকেন্ডের জন্য ব্যাটারদের উইকেট ধরে রাখার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এখনই হয়তো কোনও ব্যাটারকে দেখে মনে হচ্ছে যে তিনি ভালো ছন্দে রয়েছেন, বেশ কিছু সুন্দর দৃষ্টিনন্দন শট খেলেছেন, আর ঠিক তার পরের বলেই বলের লাইন মিস করে তিনি এলবিডব্লিউ হচ্ছেন। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া দুই দলের ব্যাটিংয়ের সময়ই এমন চিত্র দেখা গেল বারবার।
ইন্দোরের পিচে প্রথম দিনে প্রথম ঘণ্টার পর থেকেই স্পিনারদের জন্য স্বর্গরাজ্য তৈরি হয়েছিল। বলতে গেলে কোনও ব্যাটারকেই এখানে স্বস্তিতে দেখায়নি। ভারতকে মাত্র ১০৯ রানে অলআউট করার পর অজি ওপেনার উসমান খাওয়াজা অর্ধশতরান করেছিলেন বটে, কিন্তু সেখানে তার কৃতিত্ব যতটা ছিল, তার চেও অনেক বেশি কৃতিত্ব ছিল ভারতীয় বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের। ভারতীয় বোলাররা বিশেষ করে স্পিনাররা নিজেদের লাইন ও লেংথ খুঁজে পেতেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অল্পের মধ্যে গুটিয়ে যায়।
এরপরে তৃতীয় ইনিংসেও ভারতীয় দল একই রকম বিপাকে পড়লেন এবং একের পর এক উইকেট হারাতে শুরু করলেন। পিচ ততক্ষণে স্পিনারদের জন্য আরো অনুকূল হয়ে গেছে এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেক বোলারই সুন্দর এবং নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে চলেছেন। একে একে ফিরে গেলেন রোহিত (১২), গিল (৫), কোহলি (১৩), জাদেজা (৭), শ্রেয়স (২৬)। টিকে গেলেন শুধুমাত্র একজন, যার নাম চেতেশ্বর পুজারা (Cheteshwar Pujara)। এই ধরনের পিছে কেমনভাবে ব্যাটিং করতে হয় তার যেন একটি মাস্টার ক্লাস নিলেন ভারতের এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। যদিও উল্টো দিক থেকে খুব বেশি সাহায্য না পাওয়ায় এই ইনিংসটি খেলেও ভারতের যে খুব বেশি লাভ হয়েছে এমনটা নয়।
গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফরে একটি শতরান করেছিলেন তিনি প্রথম টেস্টে। চলতি বর্ডার গাভাস্কার সিরিজেও তাকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল সকলের। যদিও সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে তিনটি ইনিংসে ব্যাট করেও মনে রাখার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি তিনি। কিন্তু ইন্দোরে দ্বিতীয় ইনিংসে করে দেখালেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বরাবরই তার ব্যাট গর্জে উঠেছে। গতবার অর্থাৎ ২০১৭ সালে যখন অস্ট্রেলিয়া ভারত সফরে এসেছিল তখন ৪ ম্যাচে ৪০০-র অধিক রান করেছিলেন পূজারা। আজ উল্টো দিক থেকে একের পর এক সঙ্গীকে হারাচ্ছিলেন। শ্রেয়স আইয়ার (২৬) কিছুটা সঙ্গ দিতে পেরেছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত স্পিনারদের সামলে নিলেও ফ্লিক করতে গিয়ে খাওয়াজার হাতে ক্যাচ দিয়ে স্টার্কের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। তবে এসব দেখেও পূজারা ছিলেন অচঞ্চল।
দিনের শেষে ১৪১ বলে ৫টি চার এবং ১ টি ছক্কা সহ ৫৯ রান করে ফিরলেন তিনি। এটি ছিল তার কেরিয়ারের ৩৫ তম অর্ধশতরান। উল্টো দিক থেকে বোলিং করছিলেন ন্যাথান লিয়ন। টেস্টে ইনি আজকের আগে মোট ১২ বার পূজারাকে আউট করেছেন। কিন্তু সেই নিয়ে কোনও বাড়তি অস্বস্তি দেখা যায়নি তারকা ভারতীয় ক্রিকেটারের ব্যাটিংয়ে। শেষপর্যন্ত লিয়নই ফিরিয়েছেন পূজারাকে তার ষষ্ঠ শিকার হিসাবে লেগ স্লিপে দাঁড়ানো স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলিয়ে।
ভারতীয় ব্যাটিংকেকে আজ একাই ধ্বংস করে দিয়েছেন লিয়ন। অসাধারণ বোলিং করে নিয়েছেন ৮ উইকেট। এটি ছিল তার কেরিয়ারের ২৩ তম ফাইফার। ম্যাচে ১১ উইকেট পেয়েছেন অভিজ্ঞ অজি স্পিনার।