বাংলা হান্ট ডেস্ক: বুধবার অপরিশোধিত তেলের দাম তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আমেরিকা এবং চিনের (China-America) মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে অপরিশোধিত তেলের এই দুর্দশা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও, এর আরও একটি কারণ হল, সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে দাম কমছে। গত পাঁচ দিন ধরে তেলের দাম ক্রমাগত কমছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিন থেকে আসা পণ্যের ওপর অত্যধিক কর আরোপ করার কারণে এটি ঘটছে। এমতাবস্থায়, বিশ্ব বাণিজ্য হ্রাস পেতে পারে এবং তেলের চাহিদাও হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমেরিকা চিনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। অন্যদিকে চিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ, এই দু’টি দেশ একে অপরের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আমেরিকা এবং চিনের (China-America) মধ্যে শুল্ক লড়াই:
বুধবার দুপুর ১২টায়, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২.০৭ ডলার বা ৩.৩০ শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি ৬০.৭৫ ডলারে দাঁড়ায়। একইভাবে মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম ২.১৭ ডলার কমে ৫৭.৪১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে ৩.৬৪ শতাংশ পতন ঘটেছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসের পর ব্রেন্টের দাম সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর WTI এর দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। রয়টার্সের এক রিপোর্ট অনুসারে, হোয়াইট হাউসের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন যে, আমেরিকা চিন (China-America) থেকে আসা পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ কর আরোপ করবে। ট্রাম্প জানান যে, চিন যদি আমেরিকান পণ্যের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার না করে, তাহলে তিনি আরও কর আরোপ করবেন।
চিন-আমেরিকার লড়াই: চিন জানিয়েছে যে, তারা আমেরিকান (China-America) হুমকির কাছে মাথা নত করবে না। এদিকে, ট্রাম্প বলেছেন যে, চিন যদি আমেরিকান পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৪ শতাংশ কর প্রত্যাহার না করে, তাহলে তিনি চিনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর আরোপ করবেন। ট্রাম্প সম্প্রতি প্রায় ৬০ টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। এক্ষেত্রে চিনের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। যা পূর্বে আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্কের অতিরিক্ত ছিল। এইভাবে চিনের উপর মোট কর ৫৪ শতাংশ হয়ে গেল। জবাবে, চিনও আমেরিকান পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।
আরও পড়ুন: বুড়ো হাড়ে ভেলকি! IPL-এ বড় চমক ধোনির, গড়লেন নয়া রেকর্ড
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনের এই আগ্রাসী অবস্থান বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে প্রাথমিক চুক্তির সম্ভাবনা হ্রাস করে। যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা তৈরি করে। এর অর্থ হল চিন ও আমেরিকার মধ্যে লড়াই বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে বিশ্বে তেলের ব্যবহার কমা সম্ভব। এদিকে, তেলের দাম পতনের আরও একটি কারণ রয়েছে। OPEC+ দেশগুলি মে মাসে প্রতিদিন ৪,১১,০০০ ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এর ফলে তেলের সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কমবে।
আরও পড়ুন: QR কোডের মাধ্যমে সহজেই হবে কাজ! লঞ্চ হল New Aadhaar App, মিলবে একগুচ্ছ সুবিধা
ভারতের সুবিধা: এমতাবস্থায়, গোল্ডম্যান শ্যাক্স অনুমান করেছে যে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রেন্টের দাম প্রতি ব্যারেল ৫৫ ডলার এবং WTI ৫১ ডলারে নেমে আসতে পারে। তেলের দামের পতনের ফলে রাশিয়ার ESPO ব্লেন্ড তেলের দাম পশ্চিমীদের দ্বারা নির্ধারিত সীমা ৬০ ডলার প্রতি ব্যারেলের নিচে নেমে আসে। এটা প্রথমবারের মতো ঘটেছে। যেটি ভারতের জন্য সুখবর। কারণ এখন ভারত (India) তার বেশিরভাগ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করে। জানিয়ে রাখি যে, ভারত তার চাহিদার প্রায় ৮৭ শতাংশ তেল আমদানি করে। তাই, তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে, কোম্পানিগুলির রিফাইনিং মার্জিন বৃদ্ধি পাবে এবং শেষ পর্যন্ত গ্রাহকরা এর সুবিধা পাবেন। এর ফলে আগামী দিনে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমতে পারে।