চিনের প্রশংসার মধ্যেই লুকিয়ে “ফন্দি”? কী প্ল্যান করছে বেজিং? ভারতকে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞের

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে বারংবার ভারত-চিন (China-India) সম্পর্ক উঠে আসছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঠিক এই আবহেই চিনের কূটনীতি নিয়ে বড়সড় প্রতিক্রিয়া দিলেন গুরুগ্রামের বিশ্লেষক সিদ্ধার্থ ওঝা। তিনি জানান যে, যখন একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের প্রশংসা করে, তখন এটি দেশের সাফল্যের চেয়ে তার কূটনীতির বিষয়টিকেই স্পষ্ট করে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, সম্প্রতি, চিনের সরকার সমর্থিত গ্লোবাল টাইমস ভারত-চিন সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যকে “ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি” বলে বর্ণনা করেছে। ওঝা এই প্রশংসার পেছনে চিনের উদ্দেশ্য ফাঁস করেছেন। তিনি লিঙ্কডইনে বলেছেন যে চিনের প্রশংসা করার মধ্যে প্রায়শই একটি সতর্কতা লুকিয়ে থাকে।

বারংবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে ভারত চিন (China-India) সম্পর্ক:

ওঝার মতে, চিনের (China-India) প্রশংসা করার পেছনে ৩ টি প্রধান কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, চিন বিশ্বাস করে যে জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) এখন সিএনপি (কম্পোজিট ন্যাশনাল পাওয়ার)-র যুগে পুরনো হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, চিন কৌশলগত পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তৃতীয়ত, চিন তার শ্রেষ্ঠত্বে আত্মবিশ্বাসী। যা অহংকারে পূর্ণ এবং শীঘ্রই ভেঙে যেতে পারে।

কী জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদী পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সাথে কথোপকথনে ভারত ও চিনের (China-India) মধ্যে “স্বাস্থ্যকর এবং স্বাভাবিক” প্রতিযোগিতার কথা বলেছিলেন। ২০২০ সালের সীমান্ত বিরোধের কথা স্বীকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠকের পর আমরা সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা দেখেছি। আমরা ২০২০ সালের আগে পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ করছি।”

China-India relation recent update.

এদিকে, ওঝা লিখেছেন, “বিশ্বব্যাপী শক্তির খেলায় চিনের কূটনৈতিক প্রশংসা প্রায়শই গোপন করার চেয়ে বেশি প্রকাশ করে।” তাঁর মতে, চিনের ফোকাস এখন ডলার-ভিত্তিক জিডিপি তুলনা থেকে সরে নিয়ন্ত্রণ ওক্ষমতার গভীর স্তরে স্থানান্তরিত হয়েছে। ওঝা বলেন, “ডলারে জিডিপি? এটি নিরীহ মানুষের জন্য একটি বিভ্রম।” তিনি জানান, চিন এখন ভিন্ন মাত্রায় খেলছে।

আরও পড়ুন: ৩ টি ODI, ৫ টি T20! চলতি বছরেই ফের অস্টেলিয়া সফরে টিম ইন্ডিয়া, জেনে নিন পুরো শিডিউল

চিনের শিল্পের পরিসর অনেক বড়: এদিকে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ওঝা জানান যে, ২০২০ সালে ক্রয় ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) শর্তে চিনের জিডিপি ২৭.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটি আমেরিকার ২১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়ে অনেক বেশি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে চিন প্রযুক্তিগত সার্বভৌমত্বের ওপর জোর দিচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) অনুসারে, চিন (China-India) ২০২০ সালে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি পেটেন্ট আবেদন দাখিল করেছে। যা AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং 5G-এর মতো উদ্ভাবন ক্ষেত্রগুলিতে আধিপত্য করার ক্ষেত্রে স্পষ্ট অভিপ্রায় দেখাচ্ছে। এদিকে, চিনের শিল্পের পরিধিও অনেক বড়। এই দেশ এখন বিশ্বের ৫০ শতাংশেরও এরও বেশি ইস্পাত উৎপাদন করে। সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রেও তাইওয়ানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দৌড়ে রয়েছে চিন। এর পাশাপাশি, চিন দুর্লভ খনিজ (যেখানে চিন ৮০ শতাংশ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে) থেকে শুরু করে হুয়াওয়ের 5G নাগালের নেতৃত্বে ডিজিটাল পরিকাঠামো পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী নির্ভরতার মাধ্যমে যথেষ্ট প্রভাব তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন: “শেষ কবে ম্যাচ জিতিয়েছে মনে নেই”, ধোনির “ক্ষমতা” নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শেহবাগ, স্পষ্ট জানালেন….

তাই, ওঝার মতে সামগ্রিকভাবে, চিনের (China-India) প্রশংসাকে সতর্কতার সাথে দেখা উচিত। এই প্রশংসা প্রায়শই তাদের কৌশলগত চক্রান্তের অংশ। যার লক্ষ্য তাদের শক্তি বৃদ্ধি করা এবং অন্যদের বিভ্রান্ত করা। এমতাবস্থায়, ভারতের উচিত চিনের এই চাল থেকে সতর্ক থাকা এবং তার শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করা।

Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর

X