বাংলা হান্ট ডেস্ক: চিনের (China) সামরিক বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে মহাকাশের প্রান্তে একটি মাঝারি মাপের পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। এদিকে, এই বিস্ফোরণের পরে উদ্ভূত বিকিরণ থেকে অস্থায়ী স্তরে মেঘ তৈরি হয় বলেও জানা যায়। এমতাবস্থায়, এগুলি এমন মেঘ যা লো-আর্থ অরবিটে প্রচুর সংখ্যক উপগ্রহকে ধ্বংস করতে পারে। যার ফলে অ্যান্টি স্যাটেলাইট ধারণাও ক্রমশ শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। তবে সামনের দিনে এমনটা ঘটবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও, চিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা ইলন মাস্কের (Elon Musk) স্টারলিঙ্কের মতো পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা উপগ্রহকে ধ্বংস করতে পারে।
চিনের সামরিক মহড়া: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চিনের নর্থওয়েস্ট ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার টেকনোলজি (এনআইএনটি), পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে দেশের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করা হয়। এদিকে, চলতি মাসেই একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রসঙ্গে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট গবেষকদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে, বিভিন্ন উচ্চতায় পারমাণবিক অস্ত্রের প্রভাব দেখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি উন্নত কম্পিউটার মডেলও তৈরি করা হয়েছে।
গবেষকদের মতে, বিস্ফোরণের কারণে বাতাসে উপস্থিত কণাগুলি তেজস্ক্রিয় উপাদানে রূপান্তরিত হতে পারে। এর পরে এই কণাগুলি মেঘ তৈরি করে। এমতাবস্থায়, একটি ১০-মেগাটন অস্ত্র এতটাই বিপজ্জনক হতে পারে যে এটি ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় বিস্ফোরিত হয়। মূলত, এটি ছিল এক মহড়া, যেখানে চিনা সামরিক বিজ্ঞানীরা অ্যান্টি স্যাটেলাইট অস্ত্রের পরীক্ষা করেন।
তেজস্ক্রিয় মেঘ চিন্তা বাড়াবে: জানা গিয়েছে, মহাকাশের কাছাকাছি ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে যে তেজস্ক্রিয় মেঘ তৈরি হয়েছিল তা আকারে নিউইয়র্কের সমান। এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী লিউ লি এবং তাঁর সহকর্মীদের গবেষণাপত্রটি গত ১৫ অক্টোবর, নিউক্লিয়ার টেকনিকস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই মেঘ পৃথিবী থেকে ৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। এছাড়াও ১,৪০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হতে পারে।
পাশাপাশি, লিউ-এর দল আরও উল্লেখ করেছে যে, মহাকাশে পারমাণবিক স্যাটেলাইট বিরোধী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করার আগে বেশ কয়েকটি কম্পিউটার সিমুলেশন হয়েছে। তবে, মহাকাশে একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ বাতাসের অনুপস্থিতির কারণে বেশি মেঘ তৈরি করতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
বিপজ্জনক মেঘ: লিউ এবং তাঁর সহকর্মীদের মতে, মেঘের বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন শক্তির কণা পৃথিবীকে দখল করতে পারে। এই কণাগুলি তেজস্ক্রিয় বেল্টও গঠন করে। এই বেল্ট যেকোনো মহাকাশযানের জন্য বড় হুমকি তৈরি করতে পারে। এছাড়াও, এই বেল্টের কারণে, পারমাণবিক অস্ত্রগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। লিউর দলের মতে, মেঘে থাকা গামা রশ্মি এবং বিটা কণা অত্যন্ত শক্তিশালী। এটি মহাকাশযান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। ওই মেঘ প্রতি সেকেন্ডে ২.৩ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর উপরে উঠে যায়। এমতাবস্থায়, এগুলি উপগ্রহগুলির বিরুদ্ধে মেঘের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
স্টারলিঙ্ককে ভয় পাচ্ছে চিনা সেনাবাহিনী: ইতিমধ্যেই চিন ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-পারমাণবিক স্যাটেলাইট অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, লো আর্থ অরবিটে অবস্থিত স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটগুলিকে ধ্বংস করার জন্য চিনা সামরিক বাহিনী এই ধরণের একটি অ্যান্টি-পারমাণবিক অস্ত্রের অনুমোদন করতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে। মূলত, চিনা সামরিক বাহিনী স্টারলিঙ্ককে নিজেদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখে। এদিকে চলতি বছরের মে মাসেই, স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সিস্টেমের সাথে যুক্ত বিপদ সম্পর্কে চিনা সামরিক বাহিনী উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। পিএলএ বিশ্বাস করে যে, স্টারলিঙ্ককে মার্কিন সামরিক বাহিনী বাইরের মহাকাশে প্রভাব ফেলতে ব্যবহার করতে পারে।