বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে চিন ও পাকিস্তানের (China-Pakistan) মধ্যে সামরিক জোট ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। চিন সম্প্রতি পাকিস্তানের কাছে দ্বিতীয় হাঙর ক্লাস শ্রেণির সাবমেরিন হস্তান্তর করে। এই চুক্তিটি ৮ টি সাবমেরিনের ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের অংশ. যা পাকিস্তানের নৌ শক্তিকে বাড়িয়ে তুলবে। এদিকে, এই সামরিক চুক্তি শুধু সাবমেরিনেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, পাকিস্তানকে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন ও যুদ্ধবিমানও সরবরাহ করছে চিন।
পাকিস্তানকে বিপুল সাহায্য চিনের (China-Pakistan):
ভারতের জন্য এই জোট কতটা বিপজ্জনক: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চিন ও পাকিস্তানের (China-Pakistan) মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক অংশীদারিত্ব ভারতের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। যে পাকিস্তান একসময় আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল ছিল, এখন ওই দেশ তার সামরিক চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভরশীল। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানের মোট আমদানিকৃত অস্ত্রের ৮১ শতাংশ চিন থেকে এসেছে। যেটি আগে ছিল ৭৪ শতাংশ। এদিকে, চিনের এই কৌশল শুধু পাকিস্তানকে সামরিক শক্তি দেওয়া নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করাও।
নিজের বিপদ দেখেও সাহায্য করছে চিন: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চিন পাকিস্তানকে (China-Pakistan) অস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। কিন্তু, পাকিস্তানে চিনের নাগরিকদের ওপর ক্রমাগত হামলা হচ্ছে। সোজা কথায়, চিনা নাগরিকরা পাকিস্তানে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদী হামলার সম্মুখীন হচ্ছেন। যার কিছু উদাহরণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেখা গেছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে, করাচিতে চিনা কনস্যুলেটে একটি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়। যেখানে ৪ জন প্রাণ হারান। এদিকে, ২০২১ সালে, দাসুতেই আত্মঘাতী হামলায় ৯ জন চিনা ইঞ্জিনিয়ার প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের কাছে একটি আত্মঘাতী হামলায় ৩ জন চিনা শিক্ষক এবং একজন পাকিস্তানি ড্রাইভার প্রাণ হারান।
এদিকে, গত বছরের মার্চে দাসু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছে আত্মঘাতী হামলা ঘটে। যেখানে মারা যান ৫ জন চিনা ইঞ্জিনিয়ার ও একজন পাকিস্তানি নাগরিক। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে খাইবার পাখতুনখোয়ায় আত্মঘাতী হামলায় ৫ জন চিনা নাগরিক এবং ১ জন পাকিস্তানি ড্রাইভার মারা যান। এইসব ঘটনার পরও চিন পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক দুর্বল করেনি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে যে, চিন কি তার নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা ভাবছে, নাকি শুধুমাত্র কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্যই পাকিস্তানের (China-Pakistan) সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখছে?
আরও পড়ুন: বড় খবর! এবার আমেরিকা থেকে এল Good News, লাফিয়ে শক্তি বাড়ল ভারতের, জানলে হবেন খুশি
পাকিস্তান কেন পুরোপুরি চিনের ওপর নির্ভরশীল: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, আমেরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক আগের চেয়ে শীতল হয়েছে। আমেরিকার দেওয়া সামরিক সাহায্য বন্ধ করার পর পাকিস্তান পুরোপুরি চিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সন্ত্রাসবাদের ইস্যুতে পাকিস্তানকে মিথ্যা এবং প্রতারণার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। এদিকে, সম্প্রতি ইসলামিক স্টেট-খোরাসানের এক সন্ত্রাসবাদীকে ধরতে আমেরিকাকে সাহায্য করেছে পাকিস্তান। এই ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির আশা জাগিয়েছিল। তবে অনুমান করা হচ্ছে যে, ভারতের সাথে আমেরিকার গভীর বন্ধুত্ব এবং চিনের ওপর পাকিস্তানের নির্ভরতা আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্ককে ফের শক্তিশালী হতে দেবে না।
চিনের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাকিস্তান এখন চিন থেকে ৪০ টি J-35A যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে। যেগুলি স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত। এটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীকে নতুন শক্তি দেবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তান এই চুক্তি সম্পন্ন করতে আর্থিকভাবে প্রস্তুত কি না? আসলে, পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই চরম সঙ্কটের মধ্যে য়েছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) কাছে সাহায্য চাইছে ওই দেশ। এমতাবস্থায়, এই চুক্তি পাকিস্তানের জন্য একটি ভারি আর্থিক বোঝা হতে পারে।
আরও পড়ুন: হয়ে যান সতর্ক! উচ্চ রিটার্নের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব পারেন হারাতে, এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলেই খেল খতম
ভারত কতটা প্রস্তুত: এদিকে, পাকিস্তানের সাথে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতার মধ্যে ভারতও তার সামরিক শক্তি জোরদার করছে। ভারত ফ্রান্স থেকে রাফাল জেট কিনেছে এবং আমেরিকার সাথে উন্নত যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন তৈরি করছে। এছাড়াও, ভারত ইজরায়েল এবং রাশিয়ার সাথে সামরিক সম্পর্ক জোরদার করছে। জানিয়ে রাখি যে, আমেরিকা সম্প্রতি পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যেটি স্পষ্টতই দেখায় যে ওয়াশিংটন এই চিন-পাকিস্তান (China-Pakistan) জোট সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে। এদিকে, ভারতও এই ক্রমবর্ধমান সামরিক জোটের ওপর কড়া নজর রাখছে এবং দেশের নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছে।